চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার “গোবরাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়” এর নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন এলাকাবাসী। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গোবরাতলা এলাকাবাসীর ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতাউল ইসলাম আজিজি, গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মতিউর রহমান মতু, সাবেক মেম্বার কেতাবুল ইসলাম কেদু, গোবরাতলা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা, প্রভাষক আসাদুজ্জামান আসাদ, গোবরাতলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম মিলন, সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান, ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মো. আক্কাস আলী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, মা যেমন করে একজন শিশুকে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকেন, ঠিক তেমনি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাগণ এলাকার শিক্ষা বিস্তারে কোমলমতি শিশুদের সেভাবেই শিক্ষা দিয়ে আসছেন যুগের পর যুগ। বিদ্যালয়টি আমাদের কাছে মায়ের মতো। মায়ের নাম পরিবর্তণ কোনভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া যেখানে একটি ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, বিজিবি রহনপুর ব্যাটালিয়ন ও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নামের পূর্বে গোবরাতলা নামটি যুক্ত আছে সেখানে কি করে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম “গোবরাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়” থেকে বকুলতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হয় তা এলাকাবাসীর বোধগম্য নয়। এটা কে বা কারা কখন এবং কি উদ্দেশ্যে করেছেন সেটাও এলাকাবাসী জানেনা আর জানতেও চাইনা। কারণ আমরা এর পরিবর্তণ চাইনা।

আরও পড়ুনঃ   বিএনপির জনসভা মঞ্চে পলকের শ্যালিকা, সিংড়া বিএনপির আহ্বায়ককে শোকজ

তারা আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমার দেখেছি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাইরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কিছুটা হলেও শ্রæতিকটু আছে। কিন্তু আমরা আমাদের বিদ্যালয় তথা এলাকার নাম উচ্চারনে কোন লজ্জিতবোধ করিনা। বরং গর্ববোধ করি যে আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। আমি যদি আমার এই মায়ের নাম অন্তর থেকে উচ্চারিত করতে পারি তবে সেই মহারথি কে যিনি আমাদের বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তণে উঠেপড়ে লেগেছেন ? এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকে আজ দেশ বিদেশে নানা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তারা এই এলাকার নাম উজ্জ্বল করছেন।

বিশেষ করে দেশ সেরা কার্টুনিষ্ট রনবী (রফিকুনন্নবী) গোবরাতলার বিশিষ্ট সন্তান উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আজ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তণ করেছেন কাল হয়তো আমাদের নাড়ী পোঁতা এলাকা গোবরাতলার নামই পরিবর্তণ করে দেবেন। কিন্তু এটা হতে দেয়া যাবেনা। আমরা আমাদের বাপ-দাদার প্রতিষ্ঠিত পূর্বের “গোবরাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়” নাম বহাল রাখার জেড়ি দাবী জানাচ্ছি মানববন্ধন থেকে। অন্যথায় আগামী ৭ কর্ম দিবস পরে আরো কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন করা হবে বলে জানান বক্তারা।

আরও পড়ুনঃ   ঝালকাঠিতে ট্রাক, অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুজাউদ্দিন বলেন, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গোবরাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিগত ২০০৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর আমি সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সেই হিসেবে এই বিদ্যালয়ের প্রতি আমার আলাদা একটা মমত্ববোধ আছে। যদিও এই বছরের এপ্রিল মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। আমিও চাইনা বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তণ হোক। আর তাই সরকারী যে সকল প্রতিষ্ঠানে নাম পূনর্বহালের আবেদন করা প্রয়োজন এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে তাই করবো।

ঘন্টাব্যাপি চলা মানববন্ধনে ফারহান ইসরাক চৌধুরী হিমেলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বাসুদেব সাহা, শিক্ষার্থী মাসুদ রানা, রেজাউল করিম পলাশ, বেলাল, সজল, শ্যামল ইসলাম মানিক আলী, হযরত আলীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। প্রমুখ।