মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের নাতানজের সব সেন্ট্রিফিউজ : আইএইএ

অনলাইন ডেস্ক : ইরানের প্রধান পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র নাতানজে গত শুক্রবার ও গতকাল সোমবার রাতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আর এতে কেন্দ্রটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ যন্ত্র সেন্ট্রিফিউজের সবগুলোই ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে অনুমান করছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ—এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ইরানের নাতানজে অবস্থিত বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের প্রায় ১৫ সেন্ট্রিফিউজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এর আগে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার এবং এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছিলেন, নাতানজের ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর বিমান হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যদিও কেন্দ্রের মূল হল অক্ষত ছিল।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, ‘আমাদের মূল্যায়ন হলো—সম্পূর্ণ ধ্বংস নাও হয়ে থাকলেও আকস্মিক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে সেন্ট্রিফিউজগুলো সম্ভবত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় ভেতরেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ   গাজায় নিহত আরও ৪৬ ফিলিস্তিনি, প্রাণহানি ৪৫ হাজার ছুঁই ছুঁই

বিদ্যুৎ বিভ্রাট অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘুরতে থাকা ভঙ্গুর ও সূক্ষ্ম যন্ত্রগুলোর (সেন্ট্রিফাউজ) জন্য হুমকি তৈরি করে। এ কারণে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের তিনটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত দুটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গ্রোসি আইএইএ—এর পরিষদের বৈঠকে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন যে, নাতানজের ভূগর্ভস্থ পাইলট সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

গ্রোসি বৈঠকে জানান, পাহাড়ের গভীরে খনন করা অপর পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ফোরদোর কোনো ক্ষতি দেখা যায়নি। পরে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘সেখানে খুব সীমিতই বা কোনো ক্ষতি নথিভুক্ত হয়নি।’ আইএইএ হামলার পর থেকে পরিদর্শনে যেতে না পারলেও সংস্থাটি ব্যাপকভাবে স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করছে।

আরও পড়ুনঃ   যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব মানবে না হামাস

গ্রোসি ইস্পাহান পারমাণবিক কমপ্লেক্সের চারটি ভবনের ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এর মধ্যে একটি ইউরেনিয়াম-রূপান্তর সুবিধা রয়েছে, যা ‘ইয়েলোকেট’ ইউরেনিয়ামকে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডে রূপান্তরিত করে, সেন্ট্রিফিউজের জন্য কাঁচামাল এবং উচ্চতর ফিসাইল বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ করা যায়।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার হামলায় চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার, একটি ইউরেনিয়াম রূপান্তর প্ল্যান্ট, তেহরান চুল্লি জ্বালানি উৎপাদন প্ল্যান্ট এবং ইউএফ ৪ (ইউরেনিয়াম টেট্রাফ্লুরাইড) থেকে ইইউ (সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম) ধাতু প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা, যা নির্মাণাধীন ছিল।’ গ্রোসি বিবিসিকে তিনি জানান, ‘ইস্পাহানে ভূগর্ভস্থ স্থাপনা রয়েছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয় না।’

এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে ইরানের উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বেশির ভাগ মজুত রয়েছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে মূল্যায়নের জন্য আরও নিবিড় পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।