ক্যাম্পাসের ২০ টাকার বিরিয়ানি

19

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লাইব্রেরির পেছনে পরিবহন মার্কেটের আমচত্বরে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকার বিরিয়ানি। শুনে অবাক লাগলেও সত্য। ভাবছেন বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে কিভাবে সম্ভব। কিন্তু এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসমা পারভীন।

ক্যাম্পাসে খাবার বিক্রির বিষয়ে আসমা পারভীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালের ক্লাসে অনেক সময় না খেয়ে যায়। এমতাবস্থায় ভালো খাবার তাদের শরীরের জন্য জরুরি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বেশিরভাগরই আর্থিক সমস্যা থাকে। এতে করে তারা কম দামে ভালো খাবার খেতে পারে না। এসব ভেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ টাকায় বিরিয়ানি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আসমা পারভীন রাবির অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার কুমারপাড়া এলাকার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আফসার উজ্জামানের মেয়ে। বাবা বরেন্দ্র মৎস্য অধিদপ্তরের সেকশন অফিসারের চাকরির পেনশনের ২০ লাখ টাকা দিয়ে বছর তিনেক আগে তিনি রাজশাহী গ্রিনসিটি যুব নারী কল্যাণ সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনটিতে ৫০ জন নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সংগঠনটির মাধ্যমে আসমা পারভীন রাজশাহী কলেজ, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কলেজ, শহীদ নজমুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০ টাকায় বিরিয়ানি বিক্রি করছেন।

২০ টাকায় কীভাবে বিরিয়ানি বিক্রি করছেন জানতে চাইলে আসমা পারভীন বলেন, আমরা একবারে অনেক বাজার করে খাবার রান্না করি। এতে আমাদের খরচের পরিমাণ অনেক কমে যায়। এছাড়াও সর্বদা সমচ্ছেদ বিন্দু ধরে রাখার চেষ্টা করি। তবে মাঝেমধ্যে লাভের মুখও দেখি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরির পেছনে আমগাছ তলায় ৩ নারী বিরিয়ানি বিক্রি করছেন। শিক্ষার্থীরা দল বেধে কিনে খাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে কথা হয় গ্রিনসিটি যুব নারী কল্যাণ সংগঠনের ভারতী রানী দাশ, চন্দ্রনা সেনগুপ্ত ও মোছা. মিমের সঙ্গে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতী রানী দাশ সংগঠনটিতে কাজ করছেন ২ বছর, চন্দ্রনা সেনগুপ্ত ৩ বছর এবং মোছা. মিম ক্যাশিয়ার হিসেবে সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তারা জানান, আসমা পারভীনের নেতৃত্ব অনেক ভালো। তারা তার অধীনে শিক্ষার্থীদের কাছে ২০ টাকার বিরিয়ানি বিক্রি করে নিজেরাও মানসিকভাবে শান্তি অনুভব করেন।

খাবারের মানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদা নাসরীন বলেন, খাবারের মান নিয়ে তারা মোটামুটি সন্তুষ্ট। বর্তমানে ক্যাম্পাসের খাবারের হোটেলে ডিমের দাম ২০ টাকা রাখা হয়। সেখানে ২০ টাকায় বিরিয়ানি সঙ্গে এক টুকরো বয়লার মাংশ পাচ্ছি। এছাড়াও এক প্যাকেট বিরিয়ানির দাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ৭০-১৫০ টাকা। সে হিসেবে খাবারের দাম অনুযায়ী মান ঠিক আছে।

নারীদেরকে নিয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে রয়েছে আসমা পারভীনের সংগ্রামী জীবনের গল্প। এই নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়েছিল। শর্ত ছিল বিয়ের পরও তার লেখাপড়া করতে দেবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু বিয়ের পর ঘটে শর্তের বিপরীত। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়।

এ নিয়ে আসমা পারভীনের বাবা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে তাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসেন। এজন্য তিনি সমাজের অসহায়, বেকার, বিধবা, অস্বচ্ছল নারীদের সংগঠনে চাকরি দিয়ে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছেন, যাতে তারা সমাজে ভালোভাবে বাঁচতে পারে। এছাড়াও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য কোচিংয়েরও ব্যবস্থা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, দর্জি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন সংগঠনটির মাধ্যমে।

SHARE