রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব

14

স্টাফ রিপোর্টার: ‘এই বরিশাইল্ল্যা ইলিশের পেটি! মজাডা লন, মজাডা লন! খাইয়্যা যান ইলিশের পেটি।’- এভাবে ডেকে ডেকে পিঠাপ্রেমিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন মো. ইউসুফ। তার ডাকে সাড়াও দিচ্ছেন পিঠাপ্রেমিদের। ‘বরিশাল পিঠাঘর’ নামের স্টলটির সামনে ক্রেতাদের হুমড়ি খাওয়া ভিড়।

ওদিকে স্টলের মালিক আমির হোসেন পিঠা বানাতেই ব্যস্ত। বিক্রয়কর্মীরা পিঠাপ্রেমিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ইলিশের পেটির মতো সাদা সাদা পিঠা। রাজশাহীতে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের বিভাগীয় কমিটি আয়োজিত পিঠামেলায় সাড়া ফেলেছিল এই ইলিশ পেটি। নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হয়েছিল। শেষ হয় মঙ্গলবার।

বরিশাল পিঠাঘরের মালিক আমির হোসেন জানান, তাঁর বাড়ি বরিশাল। দুধ আর ঘি দিয়ে হয় ইলিশ পেটি পিঠা। বরিশালে ইলিশ পেটি সাধারণ পিঠা। কিন্তু বাইরে মেলা করতে গিয়ে দেখেন, সেখানকার মানুষের কাছে এটি নতুন পিঠা। তাই মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে পিঠাটি নিয়ে। বিক্রিও হয় বেশ। রাজশাহীর মেলায় পিঠার বিক্রি নিয়েও তিনি খুশি।

মেলায় ১২টি স্টল ছিল। এসব স্টলে মালপোয়া, নারকেল পুরি, লবঙ্গ, দুধচিতই, হৃদয়হরণ, জামাই নকশী, ভেজিটেবল ডিম চিতই, মুগ পাকন, কুসুমকলি, চিকেন ঝালপুরি ও পাটিসাপটাসহ নানা পিঠার সমাহার দেখা যায়। সোমবার রাতে মেহেন্দীগঞ্জ বরিশাল পিঠাঘরে আরেকটি পিঠা নিয়ে মানুষের আগ্রহ দেখা গেল। এটি ভাপা পিঠা, তবে এটি তৈরি হয় কাউনের চাল দিয়ে। এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় খেজুরের গুড় আর নারকেল কুচি। পিঠা প্রস্তুতের পর ওপরে দেওয়া হয় চেরি এবং কিসমিস। খেতে অসাধারণ এই পিঠাও। প্রতি পিস ৫০ টাকা দরের এই পিঠা খেতেও পিঠাপ্রেমিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেল।

একদিকে পিঠাপ্রেমিরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন স্টলগুলো, অন্যদিকে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পিঠা উৎসবে এভাবেই চারটি দিন পার হয়েছে। চারদিনের উৎসবের প্রতিদিনই ছিল বাঙালীর সংস্কৃতির কেচ্ছাকাহিনী, আলকাপ গান, গম্ভীরা এবং নৃত্য। সংগীতও পরিবেশন করেন শিল্পীরা।

জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব কামার উল্লাহ সরকার বললেন, ‘পিঠা আবহমান গ্রাম-বাংলার একটি ঐতিহ্য। আর বাংলার সংস্কৃতির অংশ পালাগান, আলকাপ গান বা গম্ভীরা। উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে সেই গ্রামে ফেরাতেই পিঠার সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।’

তিনি বলেন, ‘আগে শুধু সৌখিন মানুষেরাই বাড়িতে নানা ধরনের পিঠা বানাতেন। এখন তা বাণিজ্যিক হচ্ছে। আমরা আমাদের খাদ্যাভাসকে যেন ভুলে না যাই, তার জন্য এ পিঠা উৎসব হয় প্রতিবছর। এই ধরনের উৎসব হচ্ছে বলে পিঠার বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। উদ্যোগী হলে আমাদের দেশের শত রকমের পিঠা বাইরের দেশেও পাঠানো যাবে।’

SHARE