স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে রাজাকাদের তালিকা আগামী বছরের মার্চ মাসে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। শনিবার দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রাজাকারের তালিকা প্রকাশের জন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে। এই নীতিমালার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। আর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাজাকারদের তালিকা আমরা প্রকাশ করবো।
চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপির চলমান পদযাত্রা একটি অকার্যকর এবং অযৌক্তিক আন্দোলন কর্মসূচি। এ কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতন করা যায়- তার কোনো নজিরও নেই।
এর আগে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বাগমারায় বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাগমারা নিউমার্কেট মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা মুসলমানদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সেই আন্দোলন করেছেন। তারপর পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের মোট আয়ের ৮০ ভাগ আমরা উপার্জন করলেও আমাদের জন্য ব্যয় করা হতো ১৮ ভাগ আর বাকি ৮২ ভাগ ব্যয় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা জনসংখ্যায় ৫৬ ভাগ ছিলাম; কিন্তু সেনাবাহিনীতে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল ৭ ভাগ, ৯৩ ভাগ-ই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিÑ এটা ছিল তাদের ইনসাফ।
তিনি বলেন, এ সমস্ত বৈষম্যের কারণে বঙ্গবন্ধু আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে মুক্তির সনদ ‘ছয় দফা’ ঘোষণা করেন। এর পক্ষে জনগণ আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু আইয়ুব খান অস্ত্র দিয়ে সেই আন্দোলন মোকাবিলা করে। আন্দোলন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। জনগণ এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে আনে। গণঅভ্যুত্থান হয়; পেছনের দরজা দিয়ে আইয়ুব খানের পতন হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়ী হয়ে একক সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জন করে; কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা দেয় না। সংসদ বসার কথা ছিল, কিন্তু বসে না। কারণÑ তারা বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দেবে না। সরকার আরও নিপীড়নমূলক আচরণ করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলার নির্দেশ দেন। ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলার মাটিতে একজন পাকিস্তানি সৈন্য থাকা পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আমাদের সামনে হাটু গেড়ে আত্মসমপর্ণ করেÑ এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, বিকৃত হতে দেয়া যাবে না। এ সময় রাজশাহীর-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।