স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লায় নিজ বাড়িতে পানি দেখে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা চালানো কথিত চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজুকে দুই সহযোগিসহ আটক করেছে র্যাব। চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে র্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
রাজুর সঙ্গে আটক তার দুই সহযোগির মধ্যে একজনের নাম হাসান। সে রাজুর দেহরক্ষী হিসেবে তার সঙ্গে সব সময় থাকে। তার ক্যাডার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে হাসান। আর অপরজনের নাম আলামিন। সে চিকিৎসা সহকারি হিসেবে সব সময় রাজুর চেম্বারে থাকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-৫ এর রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাজু চিকিৎসার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তাই তাকে দুই সহযোগীসহ আটক করে আনা হয়েছে। সহযোগিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের সময় রাজু চিকিৎসক হিসেবে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এছাড়াও চিকিৎসার নানা কৌশল অবলম্বর করে সে রোগিদের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। যার প্রমানও পাওয়া যায়। এ কারণে দুই সহযোগিসহ রাজুকে আটক করা হয়েছে।
প্রায় ১০ বছর ধরে নিজ বাড়িতে চিকিৎসার নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ৪৪ বছর সাজাপ্রাপ্ত কথিত গ্রাম্য চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজু। চিকিৎসাবিদ্যা না থাকলেও সমাধান দিচ্ছেন হৃদরোগসহ জটিল সব রোগের। এতে প্রতারিত আর সর্বশান্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোগির সামনে রাখা হয়েছে এক গ্লাস পানি। সেই পানিতে দেখেই রোগির রোগ নির্ণয় এবং কি চিকিৎসা দেয়া হবে তা বলে দিচ্ছেন কথিত গ্রাম্য চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজু। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশো রোগি চিকিৎসা নিতে যায় তার কাছে। পুরাতন রোগিদের কাছে এক হাজার নিলেও নতুন রোগিদের গুনিতে হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। আর সাথে ধরিয়ে দেন কিছু ওষুধও।
জানতে চাইলে নিজেকে এসএসসি পাস দাবি করলেও কত সালে পাস করেছেন তা জানাতে পারেননি এই এই প্রতারক চিকিৎসক। কোন প্রশিক্ষণ না থাকলেও হৃদরোগসহ জটিল সব রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন মাহাবুর রহমান। শনিবার বেলা ১১টার দিকে সরজমিনে গিয়ে তার বাড়িতে দেখা গেল ২০ থেকে ২৫ জন রোগি রয়েছে। এক এক করে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
কথিত গ্রাম্য চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজু বলেছিলেন, ‘রোগী পানি নিয়ে আসলে তা দেখে ওই রোগী বিস্তারিত আমি বুঝতে পারি। সেই অনুপাতে তার চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’ রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা: আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘পানিতে দেখে কোনভাবেই রোগ নির্ণয় সম্ভাব নয়। এটি একটি প্রতারণা।