দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ

27

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে চুরির অপবাদে দুই নির্মাণ শ্রমিককে নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) রাজশাহী জেলা শাখা রোববার সকালে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে নির্মাণ শ্রমিকেরা অংশ নেন।

সকাল ১০টায় নগরীর গণকপাড়া মোড় থেকে মিছিলটি বের করেন। কয়েক শো নির্মাণ শ্রমিকের অংশগ্রহণে মিছিলটি সাহেববাজার ঘুরে এসে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সেখানে সমাবেশ করেন শ্রমিকেরা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি। সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি নবাব আলী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা শাখার কার্যকরী সভাপতি আজিজুল হক বাঙ্গালী। জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক মুকুল আলীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক কাউনাইন হোসেন, আমিনুল ইসলাম পলু, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনার রশিদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

তারা দুই শ্রমিক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করে বলেন, শ্রমিক মানেই অবহেলার পাত্র নয়। এই নির্মাণ শ্রমিক আছে বলেই দেশের অবকাঠমোগত এত উন্নয়ন হয়েছে। অথচ এক শ্রেণির মানুষ এই শ্রমিকদের মূল্যায়ন না করে নির্যাতন করছে। শুধু নির্যাতন নয়, অমানষিক নির্য়াতন করে মেরে ফেলছে। আর নির্মাণ শ্রমিকেরা বসে থাকবে না। এখন থেকে ইট মারলে পাটকেল মারা হবে। এর বিকল্প নেই।

শ্রমিক হত্যার বিচার না হলে সারাদেশে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন, দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে দুই শ্রমিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং আসামিদের আটক করার কারণে পুলিশকে ধন্যবাদ। কিন্তু গ্রেপ্তার চারজন ছাড়াও আরও অনেকে শ্রমিকদের নির্যাতন করেছিল। তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নইলে সারাদেশে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেবে শ্রমিকেরা। তখন কিন্তু দেশের উন্নয়ন থমকে দাঁড়াবে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীর সপুরা বিসিক শিল্প এলাকার এক বাড়ির ছাদে বেঁধে রেখে দিনভর নির্যাতন করা হয়। বাড়ির মালিক বিসিকের মডার্ন ফুড নামের একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আব্দুল্লাহ। শ্রমিকেরা এই বাড়িতে কাজে গিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা চুরির অভিযোগে তাদের নির্যাতন করা হয়।

দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় তাঁদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলে তাঁদের কাছ থেকে টাকা চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুই শ্রমিক এত নির্যাতনের পরেও টাকা চুরির স্বীকারোক্তি দেননি। রাত ৯টার দিকে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ দুই শ্রমিককে বর্বর নির্যাতনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়।

এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে করেই দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় জরুরি বিভাগেই এক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। আরেকজন মারা যান ঘণ্টাখানেক পর। নিহত দুই শ্রমিক হলেন- নওগাঁর মান্দা উপজেলার মগনিয়া গ্রামের মো. আতাউর (৪৫) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতান্নপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম রাজু (৩৫)। রাকিবুল নগরীর তেরোখাদিয়া ডাবতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এ ঘটনায় রাকিবুলের স্ত্রী সোমা খাতুন বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসজ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এর আগে দুই শ্রমিককে উদ্ধারের সময়ই চারজনকে আটক করে পুলিশ। পরে এজাহারে তাদের নাম এলে পুলিশ এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখায়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- বাড়ির মালিক মো. আব্দুল্লাহ (৩৮), আবদুল্লাহের শ্বশুর মাসুম রেজা (৫০), চাচাতো শ্যালক মঈন উদ্দিন রিয়াল (১৯) এবং কর্মচারী মো. ইমরান (২১)। গত শুক্রবার বিকালে পুলিশ এদের আদালতে তোলে। তখন তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।

SHARE