স্টাফ রিপোর্টার: একই জমি বিক্রির জন্য চারবার বায়না করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক এক নারী কাউন্সিলর। অবশেষে প্রতারিত এক ব্যক্তির মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বৃহস্পতিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।
সাবেক এই নারী কাউন্সিলরের নাম ফারজানা হক। তিনি মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী। তিনি রাসিকের ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি জমি বিক্রির জন্য চারজনের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা বায়না নিয়েছেন। পরে জমির রেজিস্ট্রি দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দিয়েছেন প্রতারিতদের।
প্রতারিতরা হলেন- মহানগরীর মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশা সূর্য্য, বহরমপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম, আলীগঞ্জ এলাকার আব্দুল গাফ্ফার, বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেক । বায়না দলিল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা হক চার দফায় চারজনের কাছ থেকে ৯৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারিতদের দাবি, ফারজানা শুধু তাদের কাছেই নয়, আরও কয়েকজনের কাছে একই জমি দেখিয়ে বায়নার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
প্রতারিতরা জানান, গত বছরের ২৩ জুন মহানগরীর উপকণ্ঠ আলীগঞ্জ মৌজায় ফারজানার কাছ থেকে প্রথমে প্রতি কাঠা সাড়ে সাত লাখ টাকা দামে দুই কাঠা জমি বায়না দলিল করেন সূর্য্য। এ সময় বায়না বাবদ সূর্যের কাছ থেকে ফারজানা ১০ লাখ টাকা নেন। ৬ মাসের জন্য এ বায়না করা হয়। ৬ মাস পর আরও ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে সূর্যকে জমি রেজিস্ট্রি দেওয়ার কথা ফারজানার। কিন্তু ছয় মাস অতিবাহিত হলেও তিনি সূর্য্যকে জমি রেজিস্ট্রি দেননি। সূর্য্যর সঙ্গে বায়না রেজিস্ট্রির দুই সপ্তাহ না পেরুতেই দ্বিতীয় বায়নাটি করেন ফারজানা। আলীগঞ্জ এলাকার আব্দুল গাফ্ফারের সঙ্গে ১০ কাঠা জমির মধ্যে পৌনে ৫ কাঠা জমির বায়না করা হয়। এ সময় প্রতি কাঠা জমির দাম নির্ধারিত হয় ৮ লাখ টাকা। মোট জমির দাম ছিল সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। বায়না বাবদ ফারজানা এ সময় গাফ্ফারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও গাফ্ফারকে জমি রেজিস্ট্রি দিচ্ছেন না। এমনকি টাকাও ফেরত দেননি।
পরে ১৭ আগস্ট পূর্বের দুটি বায়না বাতিল না করেই অত্যন্ত গোপনে আরেকটি বায়না সম্পাদন করেন ফারজানা। এবার ১০ কাঠা জমির বিপরীতে নগরীর শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৩৭ লাখ টাকা নেন। শফিকুলের কাছে প্রতি কাঠা জমির দাম ধরা হয় ৯ লাখ টাকা। এরপর প্রায় ছয় মাসের কাছাকাছি হলেও শফিকুলকে জমি রেজিস্ট্রি দেননি ফারজানা। টাকাও ফেরত দেননি।
সর্বশেষ চতুর্থবার বায়না রেজিস্ট্রি নিয়ে ফারজানা প্রতারণা করেছেন গত ২৯ ডিসেম্বর। নগরীর বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেক কাছ থেকে অতি গোপনে বায়না রেজিস্ট্রি বাবদ ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতি কাঠা জমির দাম ১১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদের মতো খালেক এবং মহিদুলের কাছে এ জমির পুরো টাকা নিয়ে ছয় মাস পরে রেজিস্ট্রি দেওয়ার কথা।
ফারজানার প্রথম বায়নাকারী সূর্য্য বিষয়টি জানার পর তাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। এরপর বিষয়টি সূর্য্য তৃতীয় বায়নাকারী আব্দুল খালেক এবং মহিদুল হককে জানান। গত ২৬ জানুয়ারি বিকাল ৩টার দিকে পবা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে যান ফারজানা। এ সময় বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে যান প্রতারিতরা। তারা ফারজানাকে সেখানে ধরে তাদের যেকোনো একজনকে জমি রেজিস্ট্রি দিতে বলেন। বাকি অন্যদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেন। কিন্তু সেখানে কিছুতেই ফারজানা রেজিস্ট্রি দেননি। টাকাও ফেরত দেননি।
বাধ্য হয়ে প্রতারিত আবদুল খালেক নগরীর রাজপাড়া থানায় বৃহস্পতিবার একটি মামলা করেন। এ মামলায় ফারজানা ও তার স্বামীসহ রেজাউল ইসলামসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অন্য দুজন আসামি হলেন- তাদের সহযোগী তোফায়েল হোসেন ও মো. শাহিন। মামলার পর ফারজানা, তার স্বামী রেজাউল এবং সহযোগী তোফায়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভয়ানক এই প্রতারকদের গ্রেপ্তারের পর এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন প্রতারিতরা।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এই নারী ভয়ংকর প্রতারক। একই জমি বার বার বায়না করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার প্রতারণার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে গ্রেপ্তার করা হবে।’