স্টাফ রিপোর্টার: রাখঢাক কিছু নেই। অফিসে বসে প্রকাশ্যেই ঘুষ নেন রাজশাহীর এক ভূমি কর্মকর্তা। ঘুষের দরকষাকষিও করেন প্রকাশ্যে। দুই দিন তাঁর দপ্তরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই কর্মকর্তার নাম মিজানুর রহমান। তিনি রাজশাহীর বড়কুঠি মহানগর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মিজানুরের তোলা টাকার ভাগ পান দপ্তরের সবাই।
সম্প্রতি তাঁর দপ্তরে গিয়ে রীতিমতো দরকষাকষি করে ঘুষ নিতে দেখা যায় মিজানুর রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। মিজানুরের বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। গত বছরের ২২ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত হিসাব তত্ত্বাবধায়কের নিরীক্ষায় তা ধরাও পড়েছে। তবে মিজানুরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে মিজানুর রহমানকে তাঁর দপ্তরে বসেই সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা যায়। তাঁর কক্ষেই বসেন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শান্ত ইসলাম। তাঁর সামনেই টাকা নেন মিজানুর। প্রথমে এক বৃদ্ধ সেবাগ্রহীতাকে মিজানুরকে ১০০ টাকার কয়েকটি নোট দিতে দেখা যায়। আবদুল হাকিম নামের এই ব্যক্তি জানালেন, তার বাড়ি নগরীর উপশহরে। ভূমি অফিসে একটা কাগজ তুলতে এসেছিলেন। অনেক কাগজের মধ্য থেকে তার কাগজ খুঁজে বের করতে সময় লাগলো। তাই পিয়নদের জন্য টাকা দিলেন। আবদুল হাকিম বলেন, ‘একটা পিয়নকে ১০টা টাকা না দিলে কাজটা করেও দিবে না। তাই দিলাম।’
বৃহস্পতিবার সকালে এক তরুণের কাছ থেকে গুণে গুণে দুই হাজার ৫০০ টাকা নিতে দেখা গেল মিজানুর রহমানকে। টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই তরুণ বললেন, ‘টাকা হচ্ছে এই কাগজের জন্য।’ এটা কিসের টাকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলতে পারব না।’ পরের প্রশ্ন করার আগেই ওই তরুণ নিজের পরিচয় না জানিয়েই দ্রুত চলে গেলেন।
এই তরুণের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ছেলের জমির খারিজের টাকা নিয়েছি।’ খারিজের জন্য কত টাকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখন বলতে পারব না। কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।’ এর আগে এক বৃদ্ধের কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কোন সমস্যা না। এটা কোন ব্যাপার না ভাই। আমি আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না মিজানুর রহমান। রাখঢাকা ছাড়া অফিসে এভাবে প্রকাশ্যেই ঘুষ নেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ তছরুপেরও অভিযোগ আছে। গত বছরের ২২ থেকে ৩১ মে মিজানুরের দপ্তরে হিসাব তত্ত্বাবধায়ক (রাজস্ব) মো. ইসরাইল হোসেন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিট করেন। এরপর ২৩ জুন নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেন।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বড়কুঠি মহানগর ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রার পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রকৃত অপেক্ষা কম যোগফল দেখিয়ে সরকারের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। মিজানুর রহমান আত্মসাৎ করেছেন ৩ হাজার ৫০৮ টাকা। এই টাকা তিনি জমা দেননি বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ থাকলেও মিজানুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘এই বিষয়গুলো আমি জানি না। আমাকে জানিয়ে উপকার করলেন। আজ আমি অফিসের বাইরে। আগামী রোববার অফিসে গিয়েই আমি অভিযোগগুলো যাচাই করে দেখব।’