স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের কাছে একটি চিঠি এসেছে। হাসপাতাল থেকে এই চিঠি লিখেছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। সে জানিয়েছে, তার বাবা-মা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। এখন গৃহকর্মীর কাজ করে সে। হাসপাতাল থেকে সে আর গৃহকর্তার বাড়ি যেতে চায় না। কিন্তু তার আর কোথাও যাবার জায়গাও নেই। তাই সে আশ্রয় চায়।
গত সোমবার এই চিঠি পান জেলা প্রশাসক। এরপর তিনি সেটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে পাঠান। চিঠির ওপরে লিখে দেন, ‘জরুরি আলোচনা প্রয়োজন।’ এ চিঠি পেয়েই সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেন। এরপর তিনি ছুটে যান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে জেনেছেন, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার।
এই কিশোরীর বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুরে। ১০ বছর আগে তার বাবা ও মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এরপর তারা আবার অন্য জায়গায় বিয়ে করেছেন। বাবা-মায়ের কেউ এই কিশোরীকে তাদের সঙ্গে নেন না। অনেক দিন নানির বাড়িতেই থেকেছে এই কিশোরী। গত বছরের ১২ আগস্ট রাজশাহী শহরের রাজপাড়া থানা এলাকার এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজের জন্য তাকে রেখে যায় চাচির বোন। বাড়িটি একটি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষের। ৮০ বছরের বেশি বয়সী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী।
জানা গেছে, ওই কিশোরী যে বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ করতো, সে বাসার নিচতলায় থাকেন একজন নার্স। তিনিই নির্যাতিত এই কিশোরীকে কয়েকদিন আগে রামেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক গিয়ে তাকে বাসায় আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই ওই কিশোরী তার সঙ্গে আসেনি। কিশোরীর থাকার জায়গা নেই দেখে পাশের বেডের রোগীর একজন আত্মীয় জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি লিখে দেন। এই চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে যাওয়ার পরই ঘটনা জানাজানি হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ জানান, চিঠিতে ওই কিশোরী লিখেছিল যে তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আসলে সে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর সত্যতাও পাওয়া যাচ্ছে। ওই কিশোরী গৃহকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছে। এখন তার পরিবারের কেউ এলে তারা মামলা করতে পারবেন। তাছাড়া ওসিসি থেকেও মামলা করা হতে পারে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ওই কিশোরী আগে সাধারণ ওয়ার্ডে ছিল। তিনি যাওয়ার পরে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর হাসপাতাল তাদের কাছে কিশোরীকে হস্তান্তর করবে। তার যাওয়ার জায়গা নেই বলে তাকে সরকারি সেফ হোমে রাখা হবে।
যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজশাহীতে একজন সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বুধবার বিকালে ফোন করা হলে তাঁর পূত্রবধূ ধরেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটিকে তারা মেয়ের মতোই আদর করতেন। রাতে তার সন্তানের সাথে নিয়েই ঘুমাতেন। শারীরীক নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তার এসব অভিযোগ শুনে তারা বিস্মিত।
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে যেদিন কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেদিন হাসপাতালে থাকা পুলিশের মাধ্যমেই খবর পেয়েছিলেন। তখন শুনেছিলেন তাকে মারধর করা হয়। কিন্তু ধর্ষণের বিষয়টি শোনেননি। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।