রাজশাহীতে নাগরিক সমাজের বৈঠক

28

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের কর্মপরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের বিয়ের হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এখনো ৫১.৪% মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর করোনা এবং করোনা পরবর্তীকালে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগের ধীরগতি থাকার কারণে বাল্যবিয়ের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

নেটজ পার্টনারশীপ ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড জাস্টিস, মানবকল্যাণ পরিষদ ও ডাসকো ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। রাজশাহীর নানকিং দরবার হলে সোমবার বেলা ১১টায় নাগরিক প্রতিনিধিদের সাথে সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা সংলাপে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে ডাসকোর প্রধান নির্বাহী অফিসার আকরামুল হকের সঞ্চালনায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নেটজের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারা খাতুন। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন নেটজের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসানা বিনতে আমীন। প্রধান অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দীন ছাড়াও অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. তৌহিদুল আরিফ। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিমা জহুরা হাবিব নারী নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন বলেন, নারীর প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আইন যাতে সংসদে পাস না হয় সেজন্য তিনি সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন। নীতি নিধারণী পর্যায়ে যারা আছেন তাদেরকে ধমান্ধতা থেকে বেরিয়ে এসে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, নারীদের কাজের মূল্যায়ণ করা হয় না। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সকলের জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে রাজশাহী শহরকে বিশেষ করে গুরুত্বপূণ স্থান ও স্কুলের সামনে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এতে করে স্কুলের সামনে যৌন হয়রানি অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রাম র্পায়েও এই উদ্যোগটি নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিমা জহুরা হাবিব বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুনিদিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে মা-বাবা বিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, বিয়ের মধ্য দিয়ে কন্যাশিশুকে আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

এসময় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রতিনিধি, শিক্ষক, শির্ক্ষাী, সাংবাদিক এবং এনজিও প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, নারী নির্যাতন নিরসনের নানাবিধ আইন ও নীতিমালা এবং সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকার পরও নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগ নারী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীকে নিরুৎসাহিত করছে। কোনো একটি একক উদ্যোগ নির্যাতন নিরসনে যতেষ্ঠ নয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত সার্বিক উদ্যোগ সামগ্রিকভাবে নারী ও মেয়েশিশুর প্রতি নির্যাতন নিরসনে সার্বিকভাবে কতটা কার্যকর ভ’মিকা রাখছে সেটি প্রশ্নের দাবি রাখে।

এই ভয়াবহ সমস্যা সমাধানে এজন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে যেমন সমন্বয় জরুরি তেমনি বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গেও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নির্যাতনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করা দরকার। একইসাথে স্থানীয় পর্যায়েও সমন্বয় জরুরি। সংলাপ থেকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যেসব চ্যালেঞ্জ ওঠে আসে সেগুলো হলো: পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, নির্যাতন প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, ভূয়া জন্ম সনদের মাধ্যমে বিবাহ, ভূয়া বিবাহ রেজিস্ট্রার ও এফিডেভিডের ভুল ব্যবহার প্রভৃতি।

SHARE