স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা ভেড়াগুলো মরে যাচ্ছে। সুবিধাভোগীরা বলছেন, বিতরণের কয়েক দিনের মধ্যেই পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়েছে ভেড়াগুলো। প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভেড়াগুলো দূর থেকে আনায় সেগুলো পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। যাঁদের ভেড়া মারা গেছে, তাঁদের নতুন ভেড়া দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৫৮টি পরিবারের মধ্যে এক জোড়া করে ভেড়া বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। ‘সমতল ভূমিতে বসবাস করা অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’–এর আওতায় এই ভেড়া দেওয়া হয়েছে। ভেড়াগুলোর দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।
সম্প্রতি সুবিধাভোগী ১০ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভেড়াগুলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ। ভেড়াগুলোর পাতলা পায়খানা হয়। একই সঙ্গে মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল ও জ্বর হয়। পরে তাঁরা অসুস্থ ভেড়াগুলোর চিকিৎসা করান। তবে কিছু ভেড়া সুস্থ হলেও ৩৮টি ভেড়া মরে যায়। এসব লক্ষণ দেখে বোঝা যায়, এগুলো পিপিআর রোগে আক্রান্ত। বিতরণের ছয় দিনের মধ্যেই মারা গেছে সর্বাধিক ভেড়া। এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাহেরপুরের বলাই চন্দ্র সরকার বলেন, বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরদিনই একটি ভেড়া মারা গেছে। মহব্বতপুর গ্রামের কড়ি রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁকে অসুস্থ ও ক্ষীণ ভেড়া দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে নেওয়ার পর থেকে সেটি অসুস্থ ছিল। চিকিৎসা করেও বাঁচানো যায়নি। চার দিন পর একটি ভেড়া মারা গেছে। আরেকটি ভেড়াও অসুস্থ।
সবিতা রানী বলেন, রুগ্ন ভেড়া দিয়ে তাঁদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। এসব ভেড়া দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন নয়, কষ্ট বাড়বে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনটেচ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের ভেড়া সরবরাহের দায়িত্ব পায়। গত বছরের ৩০ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কাজ পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানকে গত ১৭ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ১৯ নভেম্বর বাগমারায় ১১৬টি ভেড়া হস্তান্তর করা হয়। ওই দিনই সেগুলো বিতরণ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
এ বিষয়ে জেনটেচ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কারও সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ডেলিভারি চালানে দেওয়া ফোন নম্বরে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, ভেড়াগুলো পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাঁরা অসুস্থ ভেড়াগুলোকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ভেড়াগুলো দুর্বল ও রোগাক্রান্ত ছিল, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাকে করে দূর থেকে আনার কারণে সেগুলোকে খাওয়ানো হয়নি। এ জন্য প্রথমে ক্ষীণ লাগছিল। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, এক মাসের মধ্যে কারো ভেড়া মারা গেলে, সেগুলোর দায়দায়িত্ব তাঁরা বহন করবেন। মরে যাওয়া ভেড়ার পরিবর্তে নতুন ভেড়া দেওয়া হবে। এ জন্য তালিকা করা হচ্ছে।