স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা লক্ষ্মীপুরে প্রতিদিনই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর গণধ্বনি প্রতিদিন পত্রিকায় প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারপরেও লক্ষ্মীপুরের নীরব চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। লক্ষ্মীপুর পুলিশ বক্সের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ওই এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ১৭ আগস্ট লক্ষ্মীপুর পুলিশ বক্সের ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়া। তিনি এসেই একজন কনস্টেবল এবং একজন শারীরীক প্রতিবন্ধী বাদামবিক্রেতাকে দিয়ে দোকানে দোকানে চাঁদা তোলা শুরু করেন। সংবাদ প্রকাশের পর এ দুই ক্যাশিয়ার এখন আর চাঁদা নিতে যাচ্ছেন না। তাই এখন এসআই মানিক নিজেই চাঁদা তুলছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর মোড় থেকে ঐতিহ্য চত্বর, ঝাউতলা মোড় থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং লক্ষ্মীপুর থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত এলাকায় ফুটপাতের প্রত্যেক ব্যবসায়ীকেই এখন চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ওই এলাকার বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আবাসিক হোটেলগুলো থেকে চাঁদা তোলা হয়। রেহাই পান না হাসপাতালের সামনে ফুটপাতের কালাই রুটির দোকানীরাও। প্রত্যেককে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
ওই এলাকার ছোট-বড় অনেক দোকানী এবং অন্য ব্যবসায়ীরা পুলিশকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে ‘ক্ষতি হওয়ার’ ভয়ে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, আগে পুলিশ বক্সের একজন পুলিশ প্রত্যেক দিনই ইনচার্জের কথা বলে ১০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে যেতেন। কোনদিন টাকা দিতে না চাইলে দোকান উচ্ছেদ করা হবে বলে হুমকি দেখানো হতো। এই চাঁদাবাজি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে কথিত ক্যাশিয়ার আসা বন্ধ করেছেন। এখন নিজেই টাকা নিচ্ছেন এসআই মানিক। তিনি মেডিকেল এলাকার এক প্লাস্টিক ব্যবসায়ী ও এক বাদামবিক্রেতাকে দিয়ে টাকা তোলাচ্ছেন।
ওই এলাকার আবাসিক হোটেলের মালিকেরা জানান, রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই লক্ষ্মীপুর এলাকাতেই। রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ থেকে রোগীরা এখানে সেবা নিতে আসেন। তাদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছে কিছু আবাসিক হোটেলও। রোগীদের হয়রানির ভয় দেখিয়ে হোটেলগুলো থেকে চাঁদা তোলা হয়। এখন ওই বাদামবিক্রেতা ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বিক্রেতা টাকা নিয়ে যাচ্ছেন এসআই মানিকের কথা বলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যে কোন দোকান চালাতে হলে পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় মাসে মাসে। এ টাকা না দিলে উচ্ছেদ করা হয়। সম্প্রতি এক চা দোকানীকে তুলে দিয়েছে পুলিশ চাহিদামতো টাকা দিতে না পারার কারণে। আবার চাহিদামতো টাকা দিলে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দোকান দেওয়ারও অনুমতি দেয় পুলিশ। আবার যারা বেশি টাকা দেয়, তাদের সারারাতই দোকান খুলে রাখার অনুমতি দেয় পুলিশ। এ ব্যাপারে গত ২ নভেম্বর গণধ্বনি প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এখনও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মানিক মিয়া তা অস্বীকার করেছেন। তবে তাঁকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর এসআই মানিক মিয়া গণধ্বনি প্রতিদিন কার্যালয়ে একাধিকবার তার কথিত ক্যাশিয়ার ও প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরবর্তীতে যেন সংবাদ প্রকাশ না হয় সে অনুরোধ করেন। যারা এসআই মানিকের পক্ষ থেকে গণধ্বনি প্রতিদিনে এসেছিলেন, তারা মানিকের চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন অকপটেই। তবে বিষয়টি নিয়ে আর সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।