স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ড. মু. শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনে প্রায় তিন হাজার ছাত্রী প্রতিদিন ক্লাস করছেন। তাদের জন্য ভবনের তৃতীয় তলায় দুটি শৌচাগার নিয়ে আছে একটিমাত্র কমনরুম। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য সেখানে শৌচাগার অপ্রতুল। শুধু এ ভবনই নই, রাবির সকল একাডেমিক ভবনেই ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই।
বিশ^বিদ্যালয়ের অফিসগুলো বিকেল ৩টার মধ্যে বন্ধ হওয়ার সময় ছাত্রীদের কমনরুমগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুরো ক্যাম্পাসে নেই কোন পাবলিক টয়লেট। সন্ধ্যা বা রাতে ক্যাম্পাসে বের হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ছাত্রীদের। ফলে তারা ছাত্রদের টয়লেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলো ঘুরে দেখা যায়, ১০টি একাডেমিক ভবনের প্রতিটিতে ছাত্রীদের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি করে শৌচাগার যুক্ত একটি কমনরুম। এছাড়াও ভবনগুলোতে একাধিক সাধারণ ওয়াশরুম থাকলেও তা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল নয়। সাধারণ টয়লেটগুলোর অবস্থা শোচনীয়। নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে অস্বাস্থ্যকর ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরেছে। তবে নির্ধারিত সময়ে ছাত্রী কমনরুমগুলো বন্ধ হওয়ায় বাকি সময়ে বাধ্য হয়েই অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করছেন ছাত্রীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের বাইরে কোথাও কোনো পাবলিক টয়লেট নেই।
বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানান, একাডেমিক ভবনগুলোতে ছাত্রীদের কমনরুমের সংকটের কারণে তারা বেশির ভাগ সময় ছেলেদের শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে অনেক সময় নিরাপত্তার ভয় থাকে, আবার অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়। শৌচাগার না থাকায় অনেকের মধ্যে প্রস্রাব আটকে রাখার প্রবণতাও বাড়ছে। অনেকে লজ্জায় বলতেও পারেন না। এই সমস্যার কারণে ছাত্রীদের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে।
বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের একাডেমিক ভবনে মেয়েদের জন্য একটিমাত্র কমনরুম। সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয় বিকেল ৩টায়। অন্য সময় ক্যাম্পাসে বের হলে বাধ্য হয়ে যেতে হয় ছেলেদের ওয়াশরুমে। তাই এখন রুম থেকে বের হওয়ার আগে পানি খাই না, যাতে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার বলেন, ‘শৌচাগারের অপর্যাপ্ততার কারণে অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখা যায়। তখন দেখা যায় ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আবার দেরি করে ক্লাসে ঢুকতে গেলে শিক্ষকরা অনুমতি দেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রস্রাব আটকে রাখি। জানি এতে কিডনিসহ নানা রোগের আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু কিছু করার নাই।’
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রর প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারের ফলে ছেলেদের তুলনার মেয়েরা ইফেক্টেড হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কেউ যদি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত থাকেন, টয়লেট ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন না করলে পরবর্তী ব্যবহারকারী নারী একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর প্রস্রাব আটকে রাখার কারণে শিক্ষার্থীরা কিডনিসহ মূত্রাশয়ের নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য টয়লেটের বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা হয়েছে। কীভাবে ভবনগুলোতে ছাত্রী কমনরুম বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কথা চলছে। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় আগত অভিভাবকেরা যেন কোনো প্রকার বিড়ম্বনার স্বীকার না হয় সেই দিক বিবেচনা করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে টয়লেট স্থাপনের বিষয় নিয়ে আমরা ভাবছি।’