জাদুঘরে পুলিশের গৌরব-বীরত্ব

74

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহীতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা। শুধু রাজশাহী জেলাতেই শহীদ হয়েছিলেন ২৪ জন। আর রাজশাহী রেঞ্জে শহীদের সংখ্যা ১১০। শহীদ হয়েছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মামুন মাহমুদ এবং জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবদুল মজিদও। পুলিশের বীরত্বের সেই ইতিহাস এতদিন ছিল শুধু মুখে মুখে। এবার তা সবার জন্য সামনে নিয়ে আসা হলো।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) লাইন্সে উদ্বোধন হলো ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর এই জাদুঘর করে পুলিশের গৌরব আর বীরত্বের ইতিহাস সবার দেখার সুযোগ করে দেওয়া হলো। মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। এর আগে গত ৩ জানুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

আরএমপি পুলিশ লাইন্সের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই হাতের বাঁয়ে পড়বে এই জাদুঘর। একতলা লাল রঙের নতুন ভবনটির ওপরের অংশে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধের টেরাকোটা। আরেক পাশে ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের টেরাকোটা। ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

জাদুঘরে আছে শহীদ ডিআইজি মামুন মাহমুদের ছবি, সংক্ষিপ্ত জীবনী, তাঁর ব্যবহার করা পোশাক, ট্রাফিক সপ্তাহে তাঁর দেওয়া লিখিত বক্তব্য, শহীদ পুলিশ সুপার শাহ আবদুল মজিদের ছবি, সংক্ষিপ্ত জীবনী, তাঁর ব্যবহার করা লিনিয়ার্ড, তাঁর পুলিশ পি-ক্যাপ এর রেপ্লিকা, দেয়ালে শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকা, বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা পরিদর্শক আনজুম ফেরদৌসের ক্যাম্পে অবন্থানকারীন লিখিত ডায়েরির মলাট, আনজুম ফেরদৌসকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানির নিজ হাতে স্বাক্ষর করা প্রশংসাপত্র, মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন রাজশাহীর বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের মাস্টার রোল, মুক্তিযুদ্ধকালীন কনস্টেবল জহির উদ্দিনের ব্যবহৃত মগ, মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ পরিদর্শক আবদুল গফুরের যুদ্ধকালীন ব্যবহৃত কম্বল, বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ হোসেনকে ক্যাম্প কমান্ডার থেকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্র, অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ছবি, তাঁদের ব্যবহার করা পোশাক, চশমা, রাজশাহীর প্রতিরোধ যুদ্ধের বিবরণ এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট।

জাদুঘরের ভেতরে আছে একটি বঙ্গবন্ধু কর্নারও। সেখানে স্থান পেয়েছে নানা ছবি এবং বঙ্গবন্ধুর একটি আবক্ষ ভাস্কর্য। দেয়ালে লেখা বঙ্গবন্ধুর বাণী- ‘তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও। তোমরা পাকিস্তানি শোষকদের পুলিশ নও। তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য সেবা করা। আমি যেন তোমাদের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারি।’

জাদুঘরের উদ্বোধনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘রাজশাহী সব সময় ছিল প্রতিবাদী। রাজশাহীতে কী হচ্ছে তা আমরা ঢাকা থেকেই খবর রাখতাম। অনেক দিন পর পুলিশের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সবাইকে সাধুবাদ জানাই। এখানে যা আছে সবই স্মৃতি বিজড়িত। মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহীর ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ রেঞ্জের ১১০ জন শহীদ হয়েছিলেন। এটা গর্বের। এই ইতিহাস এতদিন মুখে মুখে ছিল। এখন সেটা সামনে এলো।’

SHARE