প্রবীণদের ওপরেই আ.লীগের ভরসা

92

স্টাফ রিপোর্টার: ‘আমি আওয়ামী লীগ করি’- বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর এ কথাটি বলতেই যখন অনেকে ভয় পেতেন তখন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন খাজা সামছুল আলম। জয়পুরহাটের রাজনীতিতে খাজা সামছুল আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতা হিসেবে পরিচিত। আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাঁকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের আট জেলাতেই এমন ‘দুঃসময়ের কাণ্ডারীদের’ নৌকার মাঝি করা হয়েছে। প্রার্থিদের প্রায় সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। একজন নিজেকে ভাষা সৈনিক দাবি করেন। প্রার্থী হিসেবে তাঁরা সবার পছন্দের হলেও বয়স নিয়ে একটু আপত্তি আছে। রাজশাহী বিভাগের প্রার্থিদের বয়স সর্বনিম্ন ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৮ বছর। তাঁদের গড় বয়স ৭৫।

বগুড়ার প্রার্থী ডা. মকবুল হোসেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে প্রশাসক। ২০১১ সাল থেকে জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখন ৮৮ বছর বয়সে তাঁকে এবারও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেন।

রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। তাঁর বয়স এখন ৭২। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন চেয়ে পেয়েছেন। ৭৫’ পরবর্তী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে বলে এখানকার নেতাকর্মীরা জানেন। শহীদ পরিবারের সন্তান মীর ইকবাল এখন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। দল তাঁকে ‘সম্মানিত’ করায় তিনি খুশি বলে জানিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রার্থী রুহুল আমিনও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বয়স ৭০। জেলা আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি দুবার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও দুবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এলাকায় ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। রুহুল আমিন বলেন, ‘সিনিয়র মানুষ হিসেবে সবাই শ্রদ্ধা করে। ভালোবাসে। দলও আমাকে সেই সম্মানটা দিয়েছে। আশা করি, ভোটারেরা আমাকে নির্বাচিত করবেন।’

নাটোরের প্রার্থী সাজেদুর রহমান ২০১১ সাল থেকেই জেলা পরিষদের দায়িত্বে। এখন তাঁর বয়স ৮৩ বছর। বয়সের কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। রোববার দুপুরেও তিনি অসুস্থতার কথা জানালেন। বললেন, ‘বয়স হয়েছে তো। শরীরটা ভালো যায় না। তাও প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অনুকম্পা দেখিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’ সাজেদুর রহমানও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৬২ বছর ধরে তিনি রাজনীতি করছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়েও ছিলেন সক্রিয়।

পাবনার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আবদুর রহিম পাকন। তাঁর বয়স ৬৯। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। তিনিও আওয়ামী লীগের পুরনো মানুষ হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য। তিনিও দলের পুরনো মানুষ হিসেবে পরিচিত।

সিরাজগঞ্জের প্রার্থী আবদুল লতিফ বিশ্বাসও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বয়স ৬৯ বছর। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন জেলা পরিষদের প্রশাসক। তার আগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের প্রবীণ নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবারও তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে।

নওগাঁর প্রার্থী একেএম ফজলে রাব্বী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বয়স এখন ৮৪ বছর। তিনি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে প্রশাসক। প্রবীণ নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ তাঁকে আবার মনোনয়ন দিয়েছে। ফজলে রাব্বী বলেন, ‘সুসময়ে-দুঃসময়ে সব সময় আওয়ামী লীগের সাথে থেকেছি। দল আমাকে সম্মানিত করেছে বলে আমি খুশি।’ দায়িত্ব পালনে বয়স কোন সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বয়স ৬৫ হলে মানুষ স্মরণশক্তি হারায়। আমরা বয়স ৮৪। এখনও আমি ওকালতি করি। আমার অধীনে পাঁচজন জুনিয়র কাজ করে। এই বয়সেও তো আল্লাহর রহমতে কাজ করে যাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল বলেন, ‘দলের প্রার্থী সিলেকশন ভালো হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ড প্রবীণ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন প্রার্থিদের জয়লাভ করানোর জন্য আমরা সবাই মিলে কাজ করব।’

SHARE