স্টাফ রিপোর্টার: এবার বোরো মৌসুমে রাজশাহী জেলা থেকে লক্ষ্যমাত্রার চার শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। পূরণ হয়নি সেদ্ধ এবং আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারেই ভাল দাম পাওয়ায় চাষিরা খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করেননি বলে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবার গত ২৮ আগস্ট থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। আর চাল সংগ্রহ শুরু হয় ৭ মে থেকে। ধান ও চাল সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে গত ৩১ আগস্ট। খাদ্য বিভাগ প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা ও আতপ চাল ৩৯ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে কেনে।
তবে ধান দেওয়ার কথা ছিল সরাসরি চাষিদের। জেলায় এবার ৮ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৫৫ মেট্রিক টন। শতকরা হিসেবে যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৩৫৫ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে ৩৪৬ মেট্রিক টনই সংগ্রহ হয়েছে জেলার পুঠিয়া উপজেলা থেকে। বাকি ৯ মেট্রিক টন এসেছে বাগমারা থেকে। রাজশাহী মহানগর এবং জেলার অন্য সাত উপজেলা থেকে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি।
এদিকে রাজশাহীতে এবার ১৩ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ১১ হাজার ৫৫৩ মেট্রিক টন। ঘাটতি থেকেছে ২ হাজার ১০৭ মেট্রিক টন। আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ৫০ মেট্রিক টন। সংগ্রহে ঘাটতি নিয়েই চারদিন আগে জেলায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে।
চাষি ও মিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত প্রতিমণ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৮০ টাকা। তবে বাজারেই ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে ধান বিক্রি করা গেছে। কোথাও কোথাও ধানের দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি উঠেছে। তাই চাষিরা খাদ্যগুদামে গিয়ে আর ধান সরবরাহ করেননি, স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করেছেন।
আর খাদ্যগুদামে সাধারণত মোটা চাল সরবরাহ করেন চুক্তিবদ্ধ মিলাররা। চালের সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দর ও বাজারের দর প্রায় একই। তবে চাল সরবরাহ না করলে লাইসেন্স বাতিলের ভয়ে মিলাররা খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। তারপরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দিলদার মাহমুদ বলেন, সরকার ধান-চালের দাম নির্ধারণ করে কেনে যেন চাষিরা ভাল দাম পায়। এখন স্থানীয় বাজারেই যদি কাছাকাছি দাম চাষিরা পেয়ে যায় তাহলে কষ্ট করে আর কেউ গুদামে ধান দিতে আসে না। তাছাড়া চাষিরা ভেজা ধানও বিক্রি করতে পারে। খাদ্যগুদামে তো শুধু শুকনো ধান নেওয়া হয়। এটাও বিড়ম্বনা ভেবে চাষিরা সহজে স্থানীয় বাজারে এবার দাম বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে তাদের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এতে কোন সমস্যাও নেই বলে তিনি দাবি করেন।
তবে ধান না পেলে সরকারের খাদ্যবান্ধব নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমস্যা হবে না। দেশে সংগ্রহ না হলে সরকার আমদানি করে থাকে।’