গণধ্বনি প্রতিদিন ডেস্ক : আবাসিক হোটেলে কোন মানুষ থাকতে গেলে প্রতি ২৪ ঘণ্টার জন্য গুণতে হয় নির্দিষ্ট অংকের ভাড়া। গরু-মহিষের জন্যও রাজশাহীতে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা দিয়ে রাখা যায় গরু কিংবা মহিষ। শহরের সংলগ্ন সিটিহাট এলাকায় বিরাট পশুহাট ঘিরে গড়ে উঠেছে এরকম প্রায় শতাধিক গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল।
সিটিহাটের পশুহাটটিই উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট। সপ্তাহের রবি ও বুধবার এখানে হাট বসে। আর ঈদুল আযহার সপ্তাহখানেক আগে থেকে হাট বসে প্রতিদিন। ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ আনার পর বিক্রি না হলে আগে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হতো। পরের হাটে আবার নিয়ে আসতে হতো। এতে খরচ যেমন বাড়তো, তেমনি ভোগান্তিও হতো।
এখন বিক্রি না হলে ব্যবসায়ীরা আর গরু-মহিষ ফিরিয়ে নিয়ে যান না। নিশ্চিন্তে রেখে দেন আবাসিক হোটেলে। হোটেলগুলোতে গরু-মহিষকে খাওয়ানো, গোসল করানো এবং ট্রাকে তোলার জন্য বিটেরও ব্যবস্থা আছে। গরু-মহিষগুলো যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারে তার জন্য লোহার পাইপ দিয়ে ঘিরেও রাখা আছে। গরু-মহিষের দেখাশোনার জন্য মালিকের পক্ষ থেকেই থাকেন একজন করে রাখাল। তাদেরও থাকার ব্যবস্থা আছে এই হোটেলগুলোতে।
সোমবার সকালে সিটিহাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের ভেতরে এখানে-ওখানে অন্তত ৪০টি গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল। হাটের আশপাশে বাড়িতে বাড়িতে গড়ে উঠেছে আরো প্রায় ৬০টি। সবখানেই আছে গরু মহিষ। কোরবানি ঈদের কারণে ব্যস্ত সময় কাটছে আবাসিক হোটেলের মালিকদের। পশু রাখার স্থানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ভীষণ ব্যস্ততা তাদের।
সিটি হাটের পশ্চিম পাশে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি। এক যুগ আগে বাড়ির পাশে পাঁচ কাঠা জমি কিনে গরু-মহিষের জন্য টিনশেডের আবাসিক হোটেল গড়ে তুলেছেন তিনি। এখানে আছে রাখালের থাকারও ব্যবস্থা। রাজ্জাক বলেন, ‘এখানে আমার কাজ শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। বাকি কাজ গরুর মালিকের রাখালের। রাত গেলেই গরুপ্রতি আমি ৮০ টাকা নেব।’
আব্দুর রাজ্জাকের প্রতিবেশী আব্দুর রহিমও নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল। সোমবার সকালে মহিষে ঠাসা ছিল হোটেলটি। কথা হয় রাকিব হোসেন নামের এক রাখালের সঙ্গে। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে। রাকিব জানান, তার এলাকার বাবলু মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর ১০টি মহিষ দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন তিনি। রোববার এ হাটেই মহিষগুলো কেনা হয়েছে। বাবলু এবার কিছু গরু কিনতে চান। তাই মহিষগুলোকে আবাসিক হোটেলে রাখা হয়েছে। প্রতিরাতের জন্য ভাড়া ১০০ টাকা।
হাটের ভেতরে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির আবাসিক হোটেল। ১০ বছর আগে এক বিঘা জমির উপরে তিনি এই হোটেল করেছেন। একসঙ্গে ১৪টি ট্রাকের গরু-মহিষ রাখা যায় এখানে। রফিকুল জানান, হাটের দিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তার হোটেলে এক ট্রাক গরু অথবা মহিষ রাখা যায় এক হাজার টাকায়। কিন্তু রাত ১০টা বেজে গেলে সারারাতের হিসাব করা হয়। তখন প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য নেওয়া হয় ১০০ টাকা।
রফিকুল আরো জানান, সারাবছরই তার এই হোটেল চলে। ব্যবসায়ীরা এক হাটের দিন থেকে আরেক হাটের দিন পর্যন্ত গরু-মহিষ রাখেন। তার এই হোটেল ব্যবসা বেশি জমজমাট হয় ঈদুল ফিতরের একমাস আগে থেকে। ঈদের পর আবার জমে ওঠে। ঈদুল আজহার আগের দিন পর্যন্ত তার হোটেলে বুকিং পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই তিন মাসে গরু-মহিষের আবাসিক হোটেল থেকে তার আয়-রোজগারও বেশ ভালো হয়ে থাকে।
হাটেই এভাবে গরু-মহিষ রাখতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরাও। রফিকুল ইসলামের হোটেলে সোমবার ৮টি গরু ও ৪টি মহিষ ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের। আরও গরু কিনে তিনি চট্রগ্রাম যাবেন। শহিদুল বলেন, ‘এখানে গরু-মহিষ রাখতে পারলে শান্তি লাগে। এখানে নিরাপত্তা আছে। নিরাপদে লাখ লাখ টাকার গরু-মহিষ রাখা যায়।’