বাঘা প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘায় এ বছর শীত মৌসুমে আগাম আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেতে চলেছে আলু চাষিরা। বিশেষ করে উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলসহ সমতল এলাকার শত-শত কৃষক এবার আলু চাষে ভাল দাম পাওয়ায় তারা আলু চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা বলছেন, গত বছর আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এ বছর অনেকেই আলু নিয়ে আতঙ্কে ছিলো। কিন্তু এবার বাজার মূল্য ভাল হওয়ায় সবাই আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাঘা উপজেলায় আলু চাষের লক্ষমাত্রা ছিল প্রায় দুই হাজার হেক্টর। যা অতিক্রম করে চাষাবাদ হয়েছে আড়াই হাজার হেক্টর। এরমধ্যে অর্ধেক এর বেশি লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছিল পদ্মার চরাঞ্চলে। সে মোতাবেক চরবাসীদের অনেকেই আগাম আলু চাষ করে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের দেয়া তথ্য মতে, বাঘার চরাঞ্চলের আলুর গুণগত মান ভাল। এ কারণে এখান থেকে প্রতি আলু মৌসুমে বাস এবং ট্রাকে যোগে আলু চালন দেয়া হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বাঘার চরাঞ্চলের কৃষক বাবলু দেওয়ান জানান, তিনি এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষা করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন । এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এ বছর একদিকে যেমন আলুর বাজার ভাল অন্য দিকে ফলনও আশানুরুপ। অনুরুপ কথা বলেন, সমতল এলাকার বাউসা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক ও তেুঁথুলিয়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম।
বাঘার চরাঞ্চলের চেয়ারম্যান আজিজুল আজম বলেন, উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলকে এক কথায় সবজি ভান্ডার বলা হয়। কারণ এখানে এমন কোন সবজি নেই যা উৎপাদন হয়না। তার মতে, চরাঞ্চলে কাঁচা মরিজ ও পেঁয়াজ-রসুন থেকে শুরু করে আলু, বেগুন, টমেটো, গাজর, সিম, করলা, পুইসাক, লাও, মিষ্টি কুমড়া, ও মুলাসহ সকল প্রকার সাকসবজি উৎপাদন হয় এবং এ সমস্ত উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়।
বাঘা উপজেলার পাইকারি সবজি বিক্রেতা মানিক মিঞা ও আব্বাস আলী বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে বাঘাসহ অত্র এলাকার বিভিন্ন হাটে সবজির দাম কমে যায়। যার কমতি নেই এবারও। কারণ এটি সবজি উৎপাদন মুখি এলাকা। তবে সকল প্রকার সবজির মধ্যে এখন পর্যন্ত আলুর দাম উর্ধগতি। রোববার বাঘায় খুচরা মূল্য দেশী আলু (নতুন) ৩৮ থেকে ৪০ টাকা এবং হলেন্ডার আলু ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রী হয়েছে বলে তারা জানান। তবে পুরাতন আলু নতুনের চেয়ে অর্ধেক দাম ২০-২২ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, বাঘার মাটি কৃষি আবাদের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। বিশেষ করে এই উপজেলার চরাঞ্চলে সব ধরনের সবজির উৎপাদন ভাল হয়। এ দিক থেকে এবার সমতল এলাকাতেও অনেক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। তার মতে, এবার শীত মৌসুমে লক্ষ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ আলু চাষাবাদ হয়েছে দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে। তিনি বলেন, কেবল আলু তোলা শুরু হয়েছে। আমদানি বাড়লে বিভিন্ন প্রকার সবজির মধ্যে আলুর বাজার মূল্য যে উর্ধগতি তা কিছুটা কমে আসবে।