স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে তখন বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে। প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নাই। আর এজন্যই আমরা একটি প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গড়ে তুলতে চাই। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আমরা দৈনন্দিন অনেক কাজই এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করতে পারছি। আমাদের রপ্তানি খাতেও ডিজিটাল ডিভাইস অবদান রাখতে পারে। এই ট্রেনিং সেন্টার সেই লক্ষ্যেই কাজ করবে।
রাজশাহীতে সদ্য নির্মিত ‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এই আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজশাহী সবসময়ই অবহেলিত এলাকা ছিলো, এখানে কখনো শিল্পায়ন হয়নি। রাজশাহীবাসীর উন্নয়নে আওয়ামীলীগ সরকার সবসময়ই বেশি কাজ করেছে। ‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখানকার তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে আর চাকুরির পেছনে ছুটতে হবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকুরি দিবে। আমরা সবসময় চেয়েছি প্রযুক্তিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এবং এর উন্নয়নের সুফল প্রতিটি মানুষের কাজে লাগাতে। রাজশাহী অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই ইনকিউবেটর অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার।
ভিডিও কনফারেন্সের সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
ভিডিও কনফারেন্সের সময় রাজশাহীর শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন, সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সুজায়েত ইসলাম, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহা: মোকবুল হোসেন ,রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাস ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তরুণ উদ্যোক্তাবৃন্দ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী মেডিকেল, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজশাহীতে এক জনসভায় এই অঞ্চলের জন্য একটি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। সেই পার্কে নির্মিত ‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর উদ্বোধন করে রাজশাহীবাসীর স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ করে দিলেন। রাজশাহীকে একটি প্রযুক্তি নগরী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেন। প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের একটি ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হিসেবে রাজশাহীর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম জানান, আমরা প্রায় ৩১ একর জায়গায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ গড়ে তুলছি। হাই-টেক পার্কগুলোতে দক্ষ মানবসম্পদ এর চাহিদা পূরণে দেশের ১২টি স্থানে আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় ট্রেনিং কাম ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। রাজশাহীতে ৭২ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট ‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’-এ ইতোমধ্যে ৫টি কোম্পানিকে স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যারা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চিপ ডিজাইন করছে। এই ভবনে স্টার্ট-আপদের জন্যও স্পেস রাখা হয়েছে। এই ইনকিউবেটর এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’-এ ইতোমধ্যে ১০০ জন কাজ করছে। এখানে আরো প্রায় ৫০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। আর পুরো ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর পরিচালক এ এন এম সফিকুল ইসলাম জানান যে, এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত হওয়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।