নগরীতে আদালতের ১৪৫ ধারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লংঘন করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। ৫ ই আগস্ট অভুত্থানের পরে এ সমস্ত বহুতল ভবন আইন অমান্য করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্মাণ হয়েছে।এ সমস্ত বহুতল ভবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন হাদির মোড়ের পশ্চিম পাশে চারতলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন।আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও আরডিএ এর অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে এই বহুতল ভবন।গত ৫ই আগস্ট এর পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তড়িঘড়ি করে এই ভবন নির্মাণ করেন মো: জজমেন আলী (৫৪) নামের এক ব্যক্তি।বিধি বহির্ভূতভাবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে গড়ে ওঠে চারতলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন।এই বহুতল ভবন অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ হওয়ায় আতঙ্কে ভুগছে এলাকাবাসী।মৃদু ভূমিকম্প হলেই এই ভবন ধ্বসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রতিবেশীরা।প্রতিবেশী শাহাবুদ্দিন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আরডিএ এর অথরাইজড অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। অভিযোগকারী সাহাবুদ্দিন অভিযোগে বলেন, নীতি বহিরভূতভাবে আরডিএ এর নির্দেশ অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী জজমেন আলী।আমি আমার বাড়ি নির্মাণের সময় আরডিএর নির্দেশনা মোতাবেক আমার বাড়ির দেয়ালের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে ১০ ফিট জায়গা ছেড়ে বাড়ি নির্মাণ করেছি।আমার সেই ১০ ফিট জায়গা দখল করে জজমেন আলী তার অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ করছে। তাছাড়া আমার বাড়ির গ্যাস লাইনের উপর জজমেন আলী তার বহুতল ভাবনের ১২ ইঞ্চি × ১২ ইঞ্চি কলাম নির্মাণ করেছে,যার ফলে গ্যাস জনিত কোন দুর্ঘটনা ঘটলে, গ্যাস লাইন টি মেরামত কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব না, সেই ক্ষেত্রে গ্যাস জনিত দুর্ঘটনার দায়িত্ব কে বহন করবে? তাছাড়া হালকা ভূমিকম্পে যদি ভবনটা ভেঙে পড়ে তাহলে আমার বাড়ির উপরেই পড়বে। এই অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় আশঙ্কা জনক ভাবে জীবন যাপন করছি। তাই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ   নারী কেলেঙ্কারির ভিডিও ভাইরাল, ওসি ক্লোজড

আরেকজন প্রতিবেশী সামিয়া আক্তার রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আরডিএ অথোরাইজড অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগে, অবৈধ ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, জজমেন আলী আমার রামচন্দ্রপুর মৌজার ১৪৯৯ দাগের ভিতরে জায়গা দখল করেছে।এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, মিস মামলা নং- ৫৪/২৩ এবং মূল মামলা নং- ৯৩/১০ অ:প্র:।

আরও একজন প্রতিবেশী মো: এমতেহ আল কাইয়ুম বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তিনি বলেন, জজমেন আলী ও আমার জমি পাশাপাশি হওয়ায়, আমার বসতভিটা দাগ নং- ১৪৯৯ ও বিবাদীর সম্পত্তির দাগ নং ১৫০০।তার দাগ বাদ দিয়ে আমার দাগের ভেতরে পুডিং ঢালাই করে দখলের চেষ্টা করছে, আমি বাধা দিলে বিবাদী গত ৮-৯-২০২৪ ইং তারিখ আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে মোড়ের ওপরে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালজসহ মার মুখী আচরণ করে এবং প্রাণনাশের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।

এদিকে প্রতিবেশী সামিয়া আক্তার শম্পা নিজে বাদী হয়ে, গত ২৩/০৯/২০২৪ তারিখে জেলা রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন জজমেন আলীর বিরুদ্ধে। মামলা নং-৯৭২পি/২০২৪ (বোয়ালিয়া)। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারা-।

এর আগে কিছু অপরিচিত গুন্ডা, পান্ডা,লোকজন গত ৮/৯/২০২৪ ইং তারিখে দরখাস্তকারীর দখলীয় তপশীল বর্ণিত ১৪৯৯ দাগের সম্পত্তিতে অনধিকার প্রবেশ করে এবং নালিশি সম্পত্তির ফাঁকা জায়গা জোর পূর্বক পাকা ভবন নির্মাণের জন্য মাটি খননের চেষ্টা করে।এসময় দরখাস্তকারী ও এলাকাবাসীর বাধার সম্মুখীন হলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। যাবার সময় বলে যে, তারা যে কোন মূল্যে নালিশী সম্পত্তি জোরপূর্বক পাকা ভবন নির্মাণ করবে এবং তাহাদের কাজে কেউ বাধা দিলে খুন করে ফেলবে।এ অবস্থায় নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হয়।

আরও পড়ুনঃ   রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান

এই অবস্থায় মহামান্য আদালত আদেশ প্রদান করেন যে, উক্ত সম্পত্তি স্থিতাঅবস্থায় থাকবে,ধারা ১৪৫ কার্যবিধি আদেশ অনুযায়ী প্রতিপক্ষ যদি কোন নির্মাণ কাজ করে থাকেন তাহলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গন্য হবে।

কিন্তু ১৪৫ ধারা চালু থাকলেও বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে নি।আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই নির্মাণ হয়েছে চারতলা বিশিষ্ট ভবন। যা জনজীবনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরপর রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আরডিএ এর অথোরাইজড অফিসার মো: আব্দুল্লাহ আল তারিখ সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, বিষয়টা আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আরডিএ এর অনুমোদন না নিয়েই বহুতল ভবন কিভাবে নির্মাণ করেন প্রশ্নে তিনি বলেন,আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে গত ১৫/৫/২০২৪ ইং তারিখে ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ৩ (খ)ধারা মোতাবেক কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল জজমেন আলীকে।

নোটিশে বলা আছে, অনুমোদন ছাড়া, অনুমোদিত নকশা লংঘন করে ইমারত নির্মাণ করেছেন। অবৈধ নির্মাণ কাজ কেন ভেঙে ফেলা বা অপসারণ করা যাবে না তার সন্তোষজনক জবাব আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করার জন্য জানানো যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য উপযুক্ত জবাব প্রদান না করলে, আর কোন বক্তব্য না শুনেই পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কিন্তু নোটিশ দিয়েই দায়সারা কাজ শেষ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।বর্তমানেও নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে আরডিএ কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। নক্সা ছাড়া খুব অল্প সময়ে নির্মিত ৪ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছে এলাকাবাসী।

এবিষয়ে জজমেন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন “ আমার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে এছাড়া আমার জমির পরিমান কম তাই আমার নক্সা অনুমোদন হবেনা। এছাড়াও ১৪৫ ধারার মামলাটি ২০২৪ সালে করেছে তারপর থেকে আমি বাড়ির কোন কাজ করিনি।