বাগমারায় বিদ্যুতের মিটার চুরির হিড়িক

হেলাল উদ্দীন, বাগমারা : থামছেনা চুরি, টাকায় মিলছে মিটার। রাজশাহীর বাগমারায় বিদ্যুতের মিটার চুরি থামছে না। চোরেরা টাকার বিনিময়ে চুরি করা মিটার ফেরত দিচ্ছেন।

তাঁদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর পর নির্দিষ্ট স্থানে মিটার রেখে যাচ্ছেন চুরি হওয়া মিটার। আবার গ্রাহকদের বিদ্যুৎ অফিস থেকে টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজশাহী বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছয়টি মিটার চুরি হয়েছে। এরমধ্যে থানার গেট থেকেই চুরি হয়েছে দুইটি বাণিজ্যিক মিটার। দীর্ঘ দিন ধরে মিটার চুরি হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। উলটো টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে মিটার।

ক্ষতির শিকার গ্রাহকদের অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনই জড়িত। তাঁরা এর সুরাহা না করে টাকা দিয়ে মিটার কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন।

গত পাঁচ মাসে উপজেলার প্রায় ৬৮জন গ্রাহকের মিটার চুরি হয়েছে। টাকা দিয়ে এসব মিটার উদ্ধার করা ও অফিস থেকে কেনা হয়েছে। প্রতিটি মিটারের দাম ২১ থেকে ২২ হাজার টাকা হলেও তাঁদের চোরকে দিতে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। উপজেলা নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায়।

গ্রাহকদের দেওয়া তথ্য ও নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ মাস ধরে চোরেরা গ্রাহকদের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। সব শেষ বুধবার রাতে উপজেলার বাগমারা গ্রাম থেকে
ছয়টি মিটার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যক ও সেচপাম্পের বৈদ্যুতিক মিটার রয়েছে।

চোরেরা চুরির করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা সাদা কাগজে একটি মুঠোফোন ও মিটার নম্বর লিখে রেখে যাচ্ছেন। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে আলাদা বিকাশ হিসাব খোলা নম্বর দেওয়া হচ্ছে। ওই নম্বরে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হচ্ছে। পরে দরদাম করে চাহিদার টাকা পরিশোধের পর নির্দিষ্ট স্থানে রেখে যাওয়া হচ্ছে চুরি যাওয়া মিটার। ঝামেলা এড়াতে পুলিশকে না জানিয়ে এবং দ্রুত মিটার নেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে চুরি হওয়া মিটার ফেরত নিচ্ছেন গ্রাহকেরা।

আরও পড়ুনঃ   আগুনে পুড়ল ১০০ বিঘা জমির পানের বরজ

খোঁজ নিয়ে যায়, উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার, বড় বিহানালী, গোবিন্দপাড়া, গণিপুর, যোগিপাড়া, হামিরকুৎসা, মাড়িয়া ইউনিয়ন এলাকা থেকে বেশি বিদ্যুতের মিটার চুরি হচ্ছে। আবাসিক গ্রাহক ছাড়াও বাণিজ্যিক ও সেচপাম্পের মিটার রয়েছে। অরক্ষিত স্থানে মিটার থাকায় চোরেরা সহজে রাতের বেলা চোরেরা মিটার চুরি করছেন।

এছাড়াও এগুলো কোনো রকম ঝুঁকি ছাড়াই অল্প সময়ে খুলে নেওয়া যায়। চোরেরা সেগুলো খুলে নিয়ে সেখানে মুঠোফোন নম্বর রেখে যাচ্ছেন নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। যোগাযোগ করলে সেগুলো ফেরত দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় চোরেরা আশপাশের খড়ের পালা বা ছোটখাটো ঝোঁপ জঙ্গলে রেখে যাচ্ছেন।

খাজাপাড়া গ্রামের বজলুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁর রাইসমিলের মিটার চুরি করে নেওয়া হয়েছে। তিনি মিটারে তালা দিয়ে রাখলেও রক্ষা পাননি। চোরেরা পাশের একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের মিটারও চুরি করে নিয়ে গেছে। একটি মোবাইল নম্বর ও মিটার নম্বর রেখে গেছে চোরেরা। সকালে যোগাযোগ করে দরকষাকষি করে ২০০০ টাকায় রফা হয়েছে। তবে পরে মোবাইল বন্ধ থাকায় আর উদ্ধার করা যায়নি।

বাগমারা পশ্চিমপাড়া গ্রামের চালকল মালিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, আজ বুধবার ভোরে মোটরসাইকেলে এসে চোরেরা মিটার চুরি করে নিয়ে গেছে। বিকাশ নম্বর রেখে গেছে। তবে যোগাযোগ করতে পারেনি। মিটার না হলে চালকলের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ওই গ্রামের সেচপাম্পের পরিচালক জুয়েল জানান, তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। তিনি টাকা না দিয়ে আশপাশের ঝোপঝাড়ে খুঁজছেন।

আরও পড়ুনঃ   প্রতিবেশী রাষ্ট্রের তাবেদারী করার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি: নুরুজ্জামান লিটন

এর আগে আবদুস সাত্তার, বনগ্রামের আফজাল হোসেন জানিয়েছিলেন, তাঁদের সেচপাম্প ও রাইসমিলের মিটার চোরেরা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। পরে একটি বিকাশ নম্বর রেখে গেছেন। স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের পরামর্শে টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছেন। তাঁরা জানান, ঝামেলা এড়াতে এবং দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে চোরকে টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছিলেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, চুরির যে প্রক্রিয়া তাতে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনই এর সঙ্গে জড়িত।

নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তরের মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা আমিনুর রাশেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা গ্রাহকদের বানোয়াট অভিযোগ। চোরদের অনেকে দক্ষ ইলেকটেশিয়ান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব চুরির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। চোরদের মোবাইল নম্বর ট্যাকিং করলেই ধরা যাবে। থানার গেট থেকে চুরি হচ্ছে অথচ চোর সনাক্ত হচ্ছে না। তিনি স্বীকার করেন, ভুক্তভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রথম দফায় চুরি হলে মিটারের মূল্যের অর্ধেক পল্লিবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বহন করেন, তবে একাধিক বার চুরি হলে এর পুরো মূল্য গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হয়। মূল্য পরিশোধের ২/১ দিনের মধ্যে মিটার সরবরাহ করা হয়।

এভাবে মিটার চুরি হওয়াতে বিদ্যুৎ বিভাগ উদ্বিগ্ন বলে জানান। বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, থানার গেটের সামনে থেকে চুরির বিষয়টা জানা নেই। পুলিশ চোরচক্রকে সনাক্তের চেষ্টা করছে।