স্টাফ রিপোর্টার : গাঙপাড়া খালের প্রবাহিত পানি বায়া ব্রিজ এলাকা থেকে শুরু হয়ে ১১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে দুয়ারী এলাকার বারনই নদীর সংযোগস্থলে মিলিত হতো। এক সময় এই খালের পানিতে ছোট-বড় নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এলাকাবাসীর ময়লা-আবর্জনা ফেলা, সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা এবং কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকাসহ দখল-দূষণে খালটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল।
এর ফলে পরিবেশ, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে- সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় নৌকা চলাচল। সেখানে বাসা বাঁধে ডেঙ্গু মশাসহ বিষাক্ত পোকামাকড়।
অবশেষে সুদীর্ঘ ৪৭ বছর পর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে খালটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ও কচুরিপানাসহ দখল-দূষণমুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই খালের প্রকৃত সৌন্দর্যের দেখা মিলতে শুরু করেছে। পাশাপাশি পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে পানি প্রবাহের ফলে ফিরে পেতে শুরু করেছে হারানো ঐতিহ্য ও যৌবন।
এই মহতী উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান,
খালটি মহানগরী ও বিমান বন্দরের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে দর্শনীয় স্থানটিকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে ভিড় জমাবে শিশু থেকে বয়োজ্যৈষ্ঠ পর্যটকদের। কিন্তু আমাদের কোনো কাজ যেন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব না ফেলে তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
সে দিক বিবেচনায় দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্রটি হবে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শিল্পের ছোঁয়ায়। সেই লক্ষ্যে গাঙপাড়া খালসহ নগরীর বিভিন্ন খালের খনন, সংস্কার ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনসহ আধুনিকায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডিজাইন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার জানান, আমরা বিনোদনের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করি। কিন্তু আনন্দ করতে গিয়ে অজান্তেই পরিবেশের ক্ষতি করে থাকি। এর প্রমাণ হলো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো এবং এর আশেপাশের এলাকা অপরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠা। পর্যটন স্থানের উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়া, নদী-নালার পানি ময়লায় ভরে যাওয়া ও দুর্গন্ধময় হওয়া, পশুপাখির স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি। জীববৈচিত্র্যের সঠিক পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি খালটি পরিষ্কার রাখতে জনসাধারণকে আর ময়লা-আবর্জনা না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর আরও জানান, খাল-বিলের পানি এই অঞ্চলে বিশেষ করে এর বিস্তীর্ণ বরেন্দ্রভূমিতে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, বিডি ক্লিন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে অভিযানের আওতায় গাংপাড়া খালের ১১ কিলোমিটার এলাকা পরিচ্ছন্ন করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। পরবর্তীতে দুয়ারী ও জিয়া খালকেও দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে অভিযানের আওতায় আনা হবে। এ অগ্রগতির মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীর ৮০ শতাংশ খাল অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নওহাটা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র শেখ মকবুল হোসেন জানান, গাঙপাড়া খালটি হচ্ছে বারনই নদীর ধমনি। এক সময় এই খালের মাধ্যমে বারনই নদীতে পানি প্রবাহিত হতো। আমি ছোটবেলায় দেখেছি বায়া ব্রিজ হওয়ার অনেক আগে এখানে একটি ঘাট ছিল, যেখানে নৌকা দিয়ে পারাপার হতাম।
এমনকি আমার বাপ-দাদারাও গাঙপাড়া খাল দিয়ে নৌকা নিয়ে নওহাটা হাটে আসতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে এলাকাবাসীর ময়লা ফেলা ও সঠিকভাবে পরিষ্কার না করাসহ দখল দূষণে খালটি মৃতপ্রায়। এই এলাকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এর নেতৃত্বে খাল উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে।
আমি মনে করি জনসেবার মানসিকতা নিয়ে তিনি এই মহৎ কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই অগ্রযাত্রা থেকে আমি প্রত্যাশা করবো এটি যেন শুধু পরিচ্ছন্নতা অভিযানেই সীমাবদ্ধ না থেকে স্থায়ী পরিকল্পনা করে খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন করে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করে জনগণের দুর্দশা লাঘব করা হয়।