স্টাফ রিপোর্টার : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)-এর আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যদি আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো নিজ নিজ এলাকায় সঠিকভাবে গবেষণা কাজ পরিচালনা করে। এ জন্য প্রাণিসম্পদের সমস্যা লাঘবে আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।
শনিবার (১৪ জুন) সকালে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী আঞ্চলিক কেন্দ্র আয়োজিত গোদাগাড়ীস্থ রাজাবাড়িহাট দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার প্রশিক্ষণ ভবনে ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গবেষণা পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএলআরআই ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর সমন্বয় করে কাজ না করতে পারলে সমস্যা তৈরি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুব উন্নয়নের অন্যতম বিষয় হলো প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া। আপনারা তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুন। নারী খামারিরা নারীদের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠুন। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করেও বড় উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। কৃষি দপ্তরের পাশাপাশি দেশের খাদ্য উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ক গবেষণা কাজে নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীদের যথেষ্ঠ সুযোগ-সুবিধা না দিলে আমরা বিদেশ নির্ভর থাকতে বাধ্য হবো। আমরা হয়তো বিদেশী বই পড়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারব কিন্তু বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কিংবা জ্ঞান দিতে পারব না, তা শুধু তারাই দিতে পারবে। কাজেই বিজ্ঞানীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিএলআরআই-এর বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, গবাদিপশুতে লাম্পি স্কিন ডিজিস(এলএসডি) হওয়ার ফলে চামড়ায় কোনো প্রভাব পড়ে কিনা তা গবেষণা করে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষিসহ অন্যান্য খাতে প্রণোদনা দেওয়া হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে এখনও পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। উপদেষ্টা প্রত্যাশা করেন সংশোধিত বাজেটে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রণোদনা দেওয়া হবে। কৃষিতে বিদ্যুৎ বিল ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে খামারিদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হয় না তবে যতদূর জানতে পেরেছি বাজেটে এ খাতে খামারিদের জন্য তিনশ তিন কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এদিন সকালে ‘উন্নত প্রযুক্তিতে স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ ও ভ্যালু এডেড পোল্ট্রি উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক খামারি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে ডিমের সংখ্যা বাড়াতে পারলে সকলের উপকার হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আমিষের যোগান দিবে কারণ ডিম সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য। আমরা যদি মুরগি ও ডিমের উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে দেশের আমিষের ঘাটতি পূরণ হবে। পশুপালন নিরাপদ করার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় এ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করা জরুরি কারণ খাদ্যের মাধ্যমে মানব শরীরে যদি এ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করে, তা রোধ করা কঠিন। এসময় প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপদ ফিড উৎপাদন ও সারাদেশে ছোট ছোট খামারি গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় খামারিরা প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) -এর মহাপরিচ্লক ড. শাকিলা ফারুকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী, বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো: সাইফুদ্দিন। বিএলআরআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ, খামারি প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।