অনলাইন ডেস্ক : হামজা-তপুদের এশিয়ান কাপ বাছাই ম্যাচ নিয়ে চলছে উন্মাদনা। জুন মাসেই এশিয়ান কাপ বাছাই খেলবেন আফিদা-মারিয়ারা। মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির জন্য আগামীকাল সকালে জর্ডানের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন ফুটবলাররা। এ উপলক্ষ্যে আজ বাফুফে সংবাদ সম্মেলন করেছিল। সেই সম্মেলনে নারী দলের বৃটিশ হেড কোচ পিটার বাটলার ও নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ সাবিনা খাতুন ও মাসুরা পারভীনের বাদ পড়ার প্রসঙ্গ এসেছে ঘুরেফিরে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলে কিংবদন্তী সাবিনা খাতুন। তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দুই বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই সাবিনাকে কোচ পিটার বাটলার জর্ডান সফরে দলে ডাকেননি। দলের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনকেও নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি এই বৃটিশ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এই দুই জনের বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্ন হলে বাটলারের ব্যাখ্যা, ‘সাবিনার অনেক অর্জন রয়েছে। সেটার প্রতি আমি অশ্রদ্ধাশীল নই। এরপরও বলব তার (সাবিনা) সময় শেষের দিকে। মাসুরা এখন সঠিক শেপে নেই। এই বাস্তবতা মানতে হবে।’
সাবিনাদের খেলা ভুটান লিগের ফলাফল নিয়েও খানিকটা প্রশ্ন তুলেছেন বাটলার, ‘২৮-০ স্কোরলাইন নিঃসন্দেহে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রকাশ করে না।’ সাবিনা-মাসুররা ভুটান লিগ শেষে বাফুফে ক্যাম্পে যোগদান করলে পুনরায় তারা জাতীয় দলের জন্য বিবেচনায় আসবেন কিনা এই বিষয়টি অবশ্য পরিষ্কার করেননি বাটলার।
সম্মেলনের শুরুতে কোচ তার প্রারম্ভিক মন্তব্যে দল নির্বাচনের বিভিন্ন মাত্রা নিয়ে বলেন, ‘অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে দল করা হয়েছে। গত ছয় মাসের পারফরম্যান্স, ইনজুরির ইতিহাস, খেলার দর্শন-স্টাইল, শৃঙ্খলা, সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিটিজ সব কিছুই বিবেচনা করা হয়েছে।’ সাবিনা-মাসুরা বৃটিশ কোচ বাটলার হটাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বাফুফের উদ্যোগে সেটা সমঝোতা হলেও দল নির্বাচনে অনেকের ধারণা কোচ সেটারই প্রতিশোধ নিয়েছেন। তাই কোচকে একেবারে সরাসরি জিজ্ঞাসা- সাবিনা, মাসুরা ট্যাকনিক্যাল-ট্যাকটিক্যাল বাদ নাকি ইগোগত কারণে? এর উত্তরে বাটলার বলেন, ‘তথ্য ও রেফারেন্সের ভিত্তিতেই আমি দল গড়েছি। কৃষ্ণা প্রায় দেড় বছরে খেলেনি। সানজিদাও বেশি ম্যাচ খেলেনি। নীলা ইনজুরিতে, সুমাইয়া জাতীয় দলে তেমন খেলেনি।’
সিনিয়র ফুটবলাররা সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যায়নি। তখন ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকারকে অধিনায়ক করেছিলেন কোচ বাটলার। এবার জর্ডান সফরের জন্য মারিয়া মান্ডা, ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপ্না চাকমা, শামসুন্নাহার জুনিয়রের মতো সিনিয়র ফুটবলার রয়েছেন। এরপরও অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড আফিদার হাতেই। এর কারণ সম্পর্কে বাটলার বলেন, ‘শুধু খেলা নয় এবং অভিজ্ঞতাও নয়। নেতৃত্বের গুণাবলি ও আরো কিছু বিষয়ের উপর অধিনায়কত্ব হয়। সেই বিবেচনা আমার কাছে আফিদা অধিনায়ক। এটা আমার সিদ্ধান্ত।’
সিনিয়র ফুটবলার ছাড়া আরব আমিরাত সফরে বাংলাদেশ দুই ম্যাচই হেরেছিল। দুই ম্যাচে শুধু অধিনায়ক আফিদা গোল করেছিলেন। সাবিনার অভাব অনেকটাই স্পষ্টত ছিল। আসন্ন জর্ডান সফরে সাবিনার অনুপস্থিতি সরাসরি অস্বীকার করতে পারেননি আফিদা, ‘সাবিনা আপু কিংবদন্তী। দল নির্বাচন কোচের সিদ্ধান্ত। এই দলে মনিকা আপু, মারিয়া আপুরা থাকায় আগের চেয়ে ভারসাম্য।’
সাবিনা বাংলাদেশের কিংবদন্তী। সেই কিংবদন্তী খেলোয়াড়কে পিটার বাটলার বাদ দিয়েছেন। ফুটবলাঙ্গনে অনেকের মতে, সাবিনা এখনো বাংলাদেশ দলে কয়েক মিনিট খেলার যোগ্য। নারী ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা বাদ পড়ার বিষয়টি বাফুফে খতিয়ে দেখেনি। ফেডারেশনের অবস্থান নিয়ে নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরন বলেন, ‘দল নির্বাচন কোচের স্বাধীনতা। বাফুফে কখনো এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। আমরা এক্ষেত্রে অত্যন্ত পেশাদার।’
জর্ডান সফরে চূড়ান্ত দলে ডাক পাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ৬০ শতাংশ রয়েছে অ-২০ দলের। বাটলার এটিকে ফুটবল উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখছেন। জাতীয় দল সব সময় ফলাফল প্রাধান্য ভিত্তিক থাকলেও বৃটিশ কোচের কাছে ফলের সঙ্গে ভবিষ্যত প্রজন্মও তৈরিও গুরু দায়িত্ব।
৩১ মে ইন্দোনেশিয়া ও ৩ মে জর্ডানের বিপক্ষে দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। দুই দলের র্যাংকিং বাংলাদেশের চেয়ে ৪০-৬০ ধাপ এগিয়ে। র্যাংকিংয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দলের চেয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা অনুশীলন ঘাটতি, ‘আমরা মাঠের কারণে ভালো মতো অনুশীলন করতে পারেনি। এরপরও যতটুকু প্রস্তুতি হয়েছে সেটা দিয়েই নিজেদের সেরাটা দিতে চাই।’