গাজা দখলে নেয়ার চেষ্টায় ইসরাইলের ওপর চাপ বৃদ্ধি ইউরোপের

অনলাইন ডেস্ক : অবিলম্বে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে আরো ত্রাণ পাঠাতে ইসরাইলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নতুন হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার ইসরাইল থেকে ৯৩টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে কিন্তু জাতিসংঘ জানিয়েছে, সাহায্য আটকে রাখা হয়েছে।

গাজা সিটি থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

জাতিসংঘ সোমবার ঘোষণা করেছে, গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের পর প্রথমবারের মতো সাহায্য পাঠানোর অনুমতি পেয়েছে। যার ফলে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মানবিক সংকট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা অবরোধের বিষয়ে ইসরাইলের সাথে তাদের বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনা করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, ২৭টি সদস্য দেশের ‘একাধিক সংখ্যাগরিষ্ঠ’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

তিনি আরো বলেছেন, ‘দেশগুলো মনে করে, গাজার পরিস্থিতি অস্থির এবং আমরা যা চাই তা হল মানবিক সাহায্যে প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া।’

সুইডেন জানিয়েছে, তারা ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইইউ’কে চাপ দেবে। ব্রিটেন ইসরাইলের সাথে মুক্ত-বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে।

ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং বলেছে, তারা ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তাদের কঠোরতম পদক্ষেপে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

আরও পড়ুনঃ   আমিরাতে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা: প্রধান উপদেষ্টা

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড ল্যামি কমন্স সভায় বলেছেন ‘সহায়তা বন্ধ করা, যুদ্ধ সম্প্রসারণ করা, আপনার বন্ধু এবং অংশীদারদের উদ্বেগকে উড়িয়ে দেওয়াও এটি অপ্রতিরোধ্য এবং এটি বন্ধ করা উচিত’।

ইসরায়েল এই পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টাইন বলেছেন, ইইউ’র পদক্ষেপ ‘ইসরাইল যে জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে তার সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি প্রতিফলিত হচ্ছে।’

ব্রিটেনের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মারমোরস্টাইন বলেছেন, ‘বাইরে চাপ ইসরাইলকে তার অস্তিত্ব এবং নিরাপত্তা রক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত করবে না।’

ময়দা, শিশুর খাবার, ওষুধ – ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেসামরিক বিষয় তত্ত্বাবধানকারী ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা কোগ্যাট জানিয়েছে, ‘বেকারির জন্য ময়দা, শিশুদের জন্য খাবার, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধসহ মানবিক সহায়তা বহনকারী ৯৩টি জাতিসংঘের ট্রাক গাজায় স্থানান্তর করা হয়েছে’।

জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, কয়েক ডজন ট্রাককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সমস্যার কথাও বলেছেন।

স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘আজ, আমাদের একটি দল ইসরাইলি সবুজ সংকেতের জন্য কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করেছিল পুষ্টি সরবরাহ সংগ্রহ করার জন্য। দুর্ভাগ্যবশত, তারা আমাদের গুদামে সেই সরবরাহ আনতে পারেনি’।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, সোমবার প্রবেশের জন্য অনুমোদিত নয়টি ট্রাক ‘জরুরী প্রয়োজনীয় জিনিসের সমুদ্রে এক ফোঁটা’ পানির মতো। তিনি মঙ্গলবার বিবিসি’কে বলেছেন, সময়মতো সাহায্য না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   গোদাগাড়ীতে ২০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার ১

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির বৈঠকে বলেছেন, সরবরাহ ‘পর্যাপ্ত পরিমাণে নয়’, তবে তিনি আরোও বলেছেন, ‘আমরা ধারণা করছি আগামী কয়েক দিন এবং সপ্তাহ ধরে এই প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এই প্রবাহ বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ।’

গাজার হামাস শাসকদের পরাজিত করার অঙ্গীকার করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সপ্তাহান্তে তাদের আক্রমণ তীব্র করে তোলে। হামাস ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে ইসরাইলের ওপর চালানো আক্রমণ বর্তমান যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপি’কে জানিয়েছেন রাতভর এবং মঙ্গলবার ভোরে হামলায় ‘৪৪ জন নিহত, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও মহিলা, এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে।’

বাসাল বলেছেন, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পে হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন এবং গাজা সিটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে একটি স্কুলে হামলায় আরো আটজন নিহত হয়েছেন।

এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এএফপি’কে জানিয়েছে, তারা স্কুল প্রাঙ্গণের ভিতরে ‘একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ভেতর থেকে পরিচালিত এক হামাস সন্ত্রাসীকে আঘাত করেছে’। অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে, সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গত দিনে গাজায় ‘১শ’টিরও বেশি সন্ত্রাসী আস্তানায়’ হামলা চালিয়েছে।