স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলা প্রশাসন বাগান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমপাড়া ও বাজারজাতের জন্য ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা করেছে। তবে তা মানছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসকের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও বিভিন্ন উপজেলায় আমপাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে জেলার কোনো বাগানেই এখনো আম পাকেনি। পাকার আগে আমপাড়ার অনুমতি না পেলেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে আচার কোম্পানির কাছে গোপনে অপরিপক্ব আম বাজারজাত করছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে তা অল্প এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ৭ মে জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, আমচাষি, ব্যবসায়ী, পরিবহণ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ‘নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম সরবরাহ নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ ঘোষণা করেন। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আগামী ১৫ মে থেকে সবধরনের গুটি আম পাড়া যাবে।
এছাড়া ২২ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রাণীপছন্দ ও লক্ষণভোগ, ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত, ১০ জুন থেকে ব্যানানা ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম গাছ থেকে পাড়া ও বাজারজাত করা যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর পাড়া ও বাজারজাত করা যাবে। তবে বিভিন্ন উপজেলায় এক সপ্তাহ ধরে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার খবর যাওয়া যাচ্ছে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের আড়ত পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। বানেশ্বর আড়তে বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে আম আসেনি। তবে দুপুরের দিকে দুই-এক জন চাষি ও ব্যবসায়ী আম নিয়ে আসেন এবং গোপনে কেনাবেচা করেন। এসব আম মোকামে না রেখে সরাসরি কোম্পানি অথবা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। অন্যান্য উপজেলার আমবাগান থেকেও সরাসরি কোম্পানির অফিস কিংবা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আচারের ফ্যাক্টরিতে আম পাঠানো হচ্ছে।
অন্যদিকে এক সপ্তাহ আগে দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামে ফেসুবক লাইভে আম পাড়ছিলেন ব্যবসায়ী সামিউল ইসলাম। যোগাযোগ করা হলে সামিউল বলেন, আমপাড়ার ক্যালেন্ডার এখন প্রকাশ করা হয়নি। গুটি আম পাড়ছি। এগুলো আচার কোম্পানি নেবে। আগাম গুটি আম পাড়ার অনুমতি আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুটি আম পাড়তে কোনো অনুমিত লাগে না। এছাড়া দুর্গাপুর পৌরসভার দেবীপুর, মাড়িয়া, আমগ্রাম, রঘুনাথপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম আমপাড়ার খবর পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাজশাহী জেলা সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। হেক্টরপ্রতি সম্ভাব্য গড় উত্পাদন ১৩ দশমিক ২৬ টন হিসেবে রাজশাহীতে এবার মোট উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার। এবার শুধু রাজশাহী জেলায় প্রায় ১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবনী জানান, আম পাড়ার সূচি প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। এর আগে কোথাও অপরিপক্ব আম পাড়ার খবর পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন জানান, অপরিপক্ব আমপাড়ার কোনো অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারের বাইরে কোথাও অপরিপক্ব আমপাড়া ও বাজারজাত করা হলে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।