বাঘায় আইনি জটিলতায় নাগরিক সেবা বঞ্চিত বাজুবাঘা ইউনিয়নাসী

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা : আইনি জটিলতায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা। ফলে ভোগান্তিনে ইউনিয়নবাসী।
জানা গেছে, উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও আইনি জটিলতায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকরা। দীর্ঘদিন প্রশাসক না থাকায় মৃত্যু-ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন ইউনিয়টির নাগরিকরা।

বড়ছয়ঘটি গ্রামের আমেনা বেগম জানান, পরিষদের চেয়ারম্যান নেই। প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। কয়েক দিন ঘুরে তাকেও দেখা পাচ্ছি না। ফলে তার মতো এই ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, বাজু বাঘা এখন ‘জন্মহীন’ ইউনিয়ন! জন্মনিবন্ধন সেবার স্থবিরতায় ভোগান্তিতে বাজু বাঘা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ । প্রায় চার মাস ধরে জন্ম নিবন্ধন ও সংশোধনের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় ধরে সেবার স্থবিরতা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
এই সমস্যার কারণে: সরকারি সেবা ও ভাতা গ্রহণে মানুষ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে,পাসপোর্ট ও ভিসা প্রক্রিয়া আটকে যাচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে সমস্যায় পড়ছে অনেকেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও শিক্ষাসংক্রান্ত নানা কাজে অসুবিধা হচ্ছে।

তিনি আরও লিখেছেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, উপজেলা প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। প্রশাসনের কাছে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প পদ্ধতিতে জন্মনিবন্ধন সেবা চালু করার দাবি জানাচ্ছি। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে দয়া করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
গত বৃহসপতিবার ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে বাজুবাঘা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে দাবি করা হয়, পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. ফিরোজ আহম্মেদ রঞ্জু ক্ষমতার লোভে প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন। এতে করে ইউনিয়নের জনগণ সকল প্রকার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ   রাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু রোববার, র‍্যাগিং করলে কঠোর ব্যবস্থা

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাজুবাঘা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি অবসপর প্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আসলাম হোসেন, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি খালেদুল ইসলাম, বিএনপির সমর্থক রবিউল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, এ্যাড. ফিরোজ আহম্মেদ রঞ্জু ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অঅপব্যবহার করছেন।

সরেজমিন রোববার (২৭-০৪-২৫) ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে হিসাব সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর প্রকাশ কুমার ছাড়া কাউকে পাওযা যায়নি। তিনি বাজুবাঘা ইউনিয়নে প্রশাসকের দাযিত্বে থাকা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, প্রথমত ১২০ দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের স্থগিত আদেশ অমান্য করে যাওয়া হয়নি।
বাজুবাঘা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এ্যাড. ফিরোজ আহম্মেদ রঞ্জু বলেন, দেশের পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী ঘরোনা পৌর মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা আত্নগোপনে চলে গেছেন। পরে বর্তমান সরকার সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেন। তার ভাষ্য, যেহেতু আমার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ শুন্য হয়নি। সেজন্য বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। মহামান্য আদালত ৬ মাসের জন্য তার ইউনিয়নের প্রশাসক নিয়োগ কার্যক্রম স্থপিত করেন। জনগণের ভোগান্তি আমি প্রত্যাশা করি না। তবে দ্রুত সমাধান আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ বাদে সব কটিতে আওয়ামী লীগ দলীয় ঘরনার মেয়র-চেয়ারম্যান দায়িত্বে ছিলেন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা আত্নগোপনে যান।

উপজেলা নির্বাহি অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের নির্দেশমতে ওই সব পরিষদে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ রয়েছে ৪টি ইউনিয়ন-বাজুবাঘা, গড়গড়ি, পাকুড়িয়া ও মনিগ্রামসহ আরো ৩টি ইউনিয়ন (বাউসা, আড়ানি, চকরাজাপুর) ও ২টি পৌরসভা (বাঘা,আড়ানি) রয়েছে। বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এ্যাড:ফিরোজ আহমেদ রঞ্জু। নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি (০৯-০২-২০২৫) বাউসা ও আড়ানি ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানদের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাজুবাঘা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের রিট আবেদনের কারণে অতিরক্তি দায়িত্ব পালনেও বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন নিয়োগকৃত প্রশাসক।

আরও পড়ুনঃ   বাঘায় একটি বিদেশি পিস্তলসহ ২ জন কুখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব

বর্তমানে নিজ দপ্তরের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন বাঘা পৌরসভায়- উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার। একই সাথে উপজেলা পরিষদের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। আড়ানি পৌরসভায় প্রশাসকের দাযিত্ব পালন করছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) সাবিহা সুলতানা ডলি। বাজুবাঘা ইউনিয়নে, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা, গড়গড়ি ইউনিয়নে- সহকারি প্রোগামার কর্মকর্তা, পাকুড়িয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের অফিসার, মনিগ্রাম ইউনিয়নে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, চকরাজাপুর ইউনিয়নের উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ দপ্তরের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে প্রশাসকের কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

মনিগ্রাম ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা অরুন সরকার জানান,তার ইউনিয়নে সেবা পাচ্ছেন। তবে নিয়মিত না হওয়ায় জরুরি স্বাক্ষরের জন্য অনেক সময় প্রশাসকের দপ্তরে যেতে হয়।

ইউনিয়নটির প্রশাসক, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল ইসলাম জানান, তার নিজ অফিস সামাল দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তার পরেও সেবা দেওয়ার চেষ্টার কমতি নেই। তবে জরুরি স্বাক্ষর ছাড়া অন্য কাজগুলো পরিষদে গিয়ে করে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, বর্তমান সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গত ১০ ডিসেম্বর মেয়াদ উত্তীর্ণ বাজুবাঘা, গড়গড়ি, পাকুড়িয়া, মনিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসকসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। বাজুবাঘা ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করায় ৬ মাসের স্ট্রে করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে নিয়োগকৃত প্রশাসকসহ পরিষদের সদস্যরা কাজ করতে পারছেনা। যার কারণে নাগরিক সেবা পেতে ভোগান্তি বেড়েছে। দুটি পৌরসভাসহ অন্য ইউনিয়নে নাগরিক সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।