পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক : ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতকে “সর্বোচ্চ সংযম” দেখাতে বলেছে জাতিসংঘ। মূলত হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে — যা গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার পর্যটকের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। বন্দুকধারীদের গুলিতে সেখানে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা এবং একজন নেপালের নাগরিক। আহত হন আরও অন্তত ১৭ জন।

এই ঘটনায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। তবে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে কাশ্মিরের এই হামলাকে সাজানো ঘটনা বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, এটি ছিল একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন—অর্থাৎ নিজেরাই ঘটিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা।

হামলার এই ঘটনার পর উভয় দেশই উভয়ের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে এবং এতে করে উভয় দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   আল কায়দার শীর্ষে নেতৃত্বে এখন ওসামার পুত্র হামজা

এমন অবস্থায় নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “মহাসচিব এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা ভারত ও পাকিস্তান – উভয় দেশের সরকারকে সংযম বজায় রাখার জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে না যায়।”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মহাসচিব এখন পর্যন্ত পাকিস্তান বা ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। ডুজারিক আরও বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যেকোনও সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।”

ভারতের একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মুখপাত্র বলেন, “আমরা এমন কোনও পদক্ষেপ সমর্থন করি না যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে। তাই আমরা সংযম বজায় রাখার আহ্বানই পুনর্ব্যক্ত করছি।”

তবে জাতিসংঘের এই আহ্বানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)-এ ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। আজাদ কাশ্মির সরকারের কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি এএফপি-কে বলেন, “সীমান্তে সেনারা গুলি বিনিময় করেছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনও হামলা হয়নি।”

আরও পড়ুনঃ   বলিভিয়ায় সড়ক থেকে ছিটকে ৮০০ মিটার নিচে পড়ল বাস, নিহত অন্তত ৩১

এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, “দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কাশ্মির বা জম্মুর অবস্থান নিয়ে আমরা বর্তমানে কোনও অবস্থান নিচ্ছি না।”

এদিকে পেহেলগাম হামলার পর ভারতের কড়া পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্থগিত, আকাশপথ বন্ধ এবং আরও বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষামূলক সিদ্ধান্ত।

ভারতের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা। বিশ্ব ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং দুই দেশের মধ্যকার নানা বৈরিতার মধ্যেও এতদিন চুক্তিটি টিকে ছিল।