অনলাইন ডেস্ক : স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের বিরুদ্ধে। যার ভিত্তিতে হায়দরাবাদ স্টেডিয়ামের একটি স্ট্যান্ড থেকে তার নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার ন্যায়পাল বিচারপতি ভি. ঐশ্বরিয়া। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। একইসঙ্গে রাজ্য সংস্থা ও আদালতের এই সিদ্ধান্তে তিনি বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদসংস্থা ‘প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’কে দেওয়া মন্তব্যে সম্প্রতি আজহারউদ্দিন বলেন, ‘এটি আমার জন্য খুব দুঃখের দিন। আমি আশা করি এবং প্রার্থনা করি, বিশ্বের কিংবা ভারতের আর কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে যেন এমনটা ঘটনা না ঘটে।’ হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এইচসিএ) এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি, ‘আদালতের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’
আজহার আরও বলেন, অতীতেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছিলেন। তিনি ভারতের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং ভারতীয় জনগণ ও তার ভক্তদের ওপর তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে যে, তারা হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে যোগ্য জবাব দেবে। তার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, তার জবাব শুধু তার ভক্ত এবং আদালতই দিতে পারবে।
এ ছাড়া উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় ‘নিজের ক্রিকেট খেলার জন্য অনুশোচনা হয়’ বলেও আরেকটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন আজহার। একইসঙ্গে হায়দরাবাদ ক্রিকেটের দায়িত্ব অযোগ্যরা বসে আছে দাবি করে সংবাদসংস্থা ইন্দো-এশিয়া নিউজ সার্ভিসকে (আইএএনএস) তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমাকে এতটাই কষ্ট দেয়, কিন্তু আমি মাঝেমধ্যে ক্রিকেট খেলার জন্য অনুশোচনা করি। এটি দেখা হৃদয়বিদারক যে, খেলা সম্পর্কে যার ন্যূনতম ধারণাও নেই, সেরকম মানুষ এখানে জ্ঞান এবং নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটি ক্রিকেটের প্রতিই অসম্মান।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নর্থ প্যাভিলিয়ন স্ট্যান্ডের নাম ‘ভিভিএস লক্ষ্মণে’–এর পরিবর্তে আজহারউদ্দিনের নামে রাখা হবে। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় এবং স্ট্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে তার নামে রাখা হয়। বলে রাখা ভালো, আজহারউদ্দিন ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন।
সেই বিষয়টিই গত জানুয়ারিতে তুলে ধরে হায়দরাবাদের লর্ডস ক্রিকেট ক্লাব অভিযোগ তোলে– এখানে একটি কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত) ছিল, কারণ আজহারউদ্দিন নিজেই যখন হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন, তখনই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ শুনে ন্যায়পাল বিচারপতি ভি. ঐশ্বরিয়া হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে নর্থ প্যাভিলিয়ন স্ট্যান্ড থেকে আজহারউদ্দিনের নাম সরানোর নির্দেশ দেন।
ভারতের হয়ে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আজহারউদ্দিন ১০ বছরই অধিনায়কত্ব করেছেন। পরে ফিক্সিংয়ে অভিযোগ ওঠায় তাকে নিষিদ্ধও করা হয় ক্রিকেট থেকে। এর আগে ভারতের হয়ে ৯৯টি টেস্ট এবং ৩৩৪টি ওয়ানডে খেলেছেন আজহারউদ্দিন। ব্যাট হাতে টেস্টে ৬২১৫ এবং ওয়ানডেতে তার রান ৯৩৭৮। সবমিলিয়ে করেছেন ২৯টি সেঞ্চুরি ও ৭৯টি হাফসেঞ্চুরি।