অনলাইন ডেস্ক : সিরিয়ায় সেনাবাহিনী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বাশার আল আসাদের সমর্থকদের মধ্যকার সংঘাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭১ জন এবং আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক। ব্রিটেনভিত্তিক সিরীয় মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস শুক্রবার নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
সিরিয়ার দুই উপকূলীয় শহর লাটাকিয়া এবং টারটাউসে ঘটেছে এই সংঘাত। বর্তমানে এ দু’টি শহরেই কারফিউ জারি করা হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যের সংখ্যা ৩৫ জন, বাশারপন্থি বিদ্রোহীদের সংখ্যা ৩২ জন এবং বাকি ৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি।
এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সম্প্রতি বাশারপন্থি সশস্ত্র যোদ্ধাদের ধরতে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এই অভিযান চলাকালেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সিরিয়ার বৃহত্তম বন্দরশহর লাটাকিয়ার শহরতলী এলাকায় সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত বাঁধে বাশারপন্থি বিদ্রোহীদের। সেই সংঘাতে ১৬ জন সেনাসদস্য বিদ্রোহী নিহত হন। সেনাসদস্যদের ওপর অ্যামবুশ হামলা চালিয়েছিল বিদ্রোহীরা।
এদিকে লাটাকিয়ায় সংঘাত শুরুর পর মূল শহর এবং অপর উপকূলবর্তী শহরে টারটাউসে বিক্ষোভ শুরু করে হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভাকারীদের সবাই বাশারপন্থি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, অবিলম্বের উপকূলীয় দুই শহর থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করতে হবে।
লাটাকিয়া ও টারটাউসের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে দুই শহরে আরও বেশি সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়। শুক্রবার দুই শহরে সেনা সদস্যরা টহল দিতে নামলে ফের শুরু হয় সংঘাত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। সেসব ভিডিওতে ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধের চিত্র দেখা গেছে।
সিরিয়ার প্রধান দুই বন্দরশহর লাটাকিয়া ও তারতাউস সিরিয়ার সংখ্যালঘু মুসলিম আলাউই সম্প্রদায় অধ্যুষিত। শিয়াপন্থার একটি উপশাখা এই আলাউই সম্প্রদায়। সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ আলাউই ; কিন্তু আসাদ পরিবারের গত ৫০ বছরের শাসনে এই সম্প্রদায় ব্যাপকমাত্রায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। প্রথমে হাফিজ এবং তারপর বাশার আল আসাদের প্রতি একান্ত অনুগত এই সম্প্রদায়ের লোকজন দেশটির সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু পদেও ছিলেন। লাটাকিয়া ও তারতাউসে যেসব বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, তাদের অনেকেই বাশারের আমলে সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে ছিলেন।
সিরিয়ার অধিকাংশ জনগণ সুন্নিপন্থি। গত ডিসেম্বরে যে অভিযানে বাশার ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়েছে, সেই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সশস্ত্রগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামস (এইচটিএস) এবং গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতা আহমেদ আল শারাও সুন্নিপন্থি।
এদিকে লাটাকিয়া ও তারতাউসের পাশাপাশি সিরিয়ার অপর দুই শহর হোমস এবং আলেপ্পোতেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। গত ডিসেম্বরে বাশারের দেশত্যাগ এবং নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম এত বড় আকারের সংঘাত শুরু হয়েছে সিরিয়ায়।