আওয়ামী লীগ নেতা ‘ব্যাটারি বাবু’ ভবনে ঢুকে হাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার : ভবনে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের নাম নিরাপত্তাপ্রহরী খাতায় লিখে রাখেন। সেখানে মোস্তাক আহমেদ বাবুর নামও লেখা আছে। ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজেও তাঁকে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক ঘণ্টার অভিযানেও তাঁকে আর পাওয়া যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্র-জনতার চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যাওয়া মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্র-জনতা খবর পায়, নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি বহুতল ভবনের নিজের ফ্ল্যাটে উঠেছেন ব্যাটারি বাবু। তারপর ঘেরাও করা হয় ভবনটি। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে আসে থানা-পুলিশ, ডিবি পুলিশ, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সিআরটি, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব। পুলিশ সদস্যরা ভেতরে গিয়ে তল্লাশি করলেও ব্যাটারি বাবুর খোঁজ মেলেনি। তারপরও ভোর পর্যন্ত ভবনটি ঘিরে রেখেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুনঃ   দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু

মোস্তাক রাজশাহীতে এক রহস্যময় চরিত্রের নাম। নগরের স্টেডিয়াম মার্কেটে তাঁর ‘সাব্বির আয়রন স্টোর’ নামের একটি ব্যাটারির দোকান আছে। এ জন্যই তাঁর ডাকনাম হয়ে গেছে ব্যাটারি বাবু। সামান্য ব্যাটারির দোকান থাকলেও তিনি বিলাসী জীবন যাপন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৩ সালে ক্রিকেটার জিকো হত্যার আলোচিত মামলার আসামি ছিলেন মোস্তাক। ওই মামলা হওয়ার পর তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালের দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তখন তিনি মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মীর তৌহিদুর রহমান কিটুর ছত্রচ্ছায়ায় রাজনীতি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। এখনো তিনি এই পদেই আছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর নামে মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফোরামের উদ্যোগে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচী ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ভবন ঘিরে রেখেও মোস্তাককে খুঁজে না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ছাত্র-জনতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাঁকে ঢুকতে দেখেছি। পেছনে পেছনে এখানে আসি। তারপর তাঁকে পাওয়া গেল না। সে কি দরবেশ যে ভবনে ঢুকেই হাওয়া হয়ে গেল? এটা কীভাবে সম্ভব!’

আরেক ছাত্র সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা ফ্ল্যাটের সামনে গেলে পরিবারের সদস্যরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন মোস্তাককে গ্রেপ্তার না করানোর জন্য। কিন্তু তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে কী হয়েছে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। দ্রুত মোস্তাককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘রাত ৩টা পর্যন্ত অভিযান চলেছে। কিন্তু আসামিকে পাওয়া যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’