অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে— সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর এ নিয়ে অসংখ্যবার অভিযোগ তুলেছে ভারত। তবে তাদের নিজেদের দেশে মুসলিম সংখ্যালঘুরা যে সত্যিকার অর্থে নির্যাতিত হচ্ছে, এ বিষয়টি তারা এড়িয়ে যাচ্ছে বা ইচ্ছে করে চেপে রাখছে। মূলত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে ভারত ‘ভণ্ডামি’ করছে।
নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিসার্চ স্কলার শাহাদাত স্বাধীন ইস্ট এশিয়া ফোরামে লিখেছেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মগুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ‘দেশদ্রোহিতার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে ওই সময় জামিন দেওয়া হয়নি। ওই সময় তার অনুসারীরা এক মুসলিম আইনজীবীকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই সময় সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরির শঙ্কা তৈরি হলেও বাংলাদেশ সরকার এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়াগুলো তখন ওই মুসলিম আইনজীবীর হত্যাকাণ্ডকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি চিন্ময়ের গ্রেপ্তারকে হিন্দু নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে দেখানোর প্রচেষ্টা চালায় তারা।
চিন্ময়ের জন্য ভারতের হিন্দু সংগঠনগুলো দিল্লি, কলকাতা এবং মুম্বাইয়ে বিক্ষোভ করে। এমনকি তারা আগরতলায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালায়। ভারতীয় রাজনীতিবিদরা এতে আরও উস্কানি দেয়। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে অবরোধ আরোপের দাবি জানাতে থাকে।
শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট পালানোর পর হিন্দুদের ওপর কিছু হামলা হয়েছে, যদিও সেগুলো রাজনৈতিক ছিল না। কিন্তু ভারত এ নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিন্দুদের ওপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। আর ওই সময় স্বৈরাচার হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। অপরদিকে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ৮৮টি অভিযোগ দায়ের ও এসব ঘটনায় ৭০ জন গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য জানায়। তা সত্ত্বেও ভারতীয় মিডিয়া তখনও এ নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে।
অথচ ভারত সরকার ওই সময়ই তাদের মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশে মুঘল আমলের শাহী জামে মসজিদ নিয়ে হিন্দু-মুসলিমের দ্বন্দ্বে তিন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই মসজিদে জরিপ চালাতে আসলে মুসলিমরা বাধা দেয়। এতে করে তাদের নির্মমভাবে গুলি ছোড়া হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই হত্যাকাণ্ড পুরোপুরি এড়িয়ে যায়।
ভারতে মুসলিমরা সার্বক্ষণিক হুমকির মুখে থাকে উল্লেখ করে এই স্কলার বলেছেন, গরুর মাংস বহনের অভিযোগে তাদের পিটিয়ে হত্যার মতো নির্মম ঘটনাও সেখানে অহরহ ঘটে।
তিনি আরও বলেন, হাসিনা পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পরই উগ্রবাদী দল হিন্দু রক্ষা দল একটি স্থানীয় বস্তি ভাঙচুর করে। সেখানকার বাসিন্দাদের বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিহিত করে হেনস্তা করে। এর একমাত্র কারণ ছিল তারা মুসলিম।
এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্টে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা সাব্বির মালিককে হরিয়ানায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বলা হয় তিনি গরুর মাংস বহন করছেন। কিন্তু এটি ছিল একটি মিথ্যা তথ্য।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় আট মুসলিমকে গরুর মাংস বহন বা পাচারের অভিযোগে হত্যা করা হয়। অপরদিকে গত বছরের নির্বাচনের সময় একইভাবে ৯ মুসলিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মূলত উগ্র হিন্দুদের সমর্থন পেতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সন্ত্রাসীরা এসব কাজ করেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসায় পর ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় আছেন। অথচ এই বিজেপিই এখন বাংলাদেশকে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করছে।
আর এগুলো করে ভারত বাংলাদেশের মতো একজন বিশ্বাসী বন্ধুকে হারাতে পারে বলে জানিয়েছেন এই স্কলার। যেটি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।