রমজানের শুরুতেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নাকাল ভোক্তারা

অনলাইন ডেস্ক : গত রমজানের তুলনায় এ বছর রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় ৮টি পণ্য যেমন পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর, গরুর মাংস, রসুন এবং আলুর দাম ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

রমজান শুরুর মাত্র চার দিন আগে, বেসরকারি চাকরিজীবী লোকমান হোসেন একটু সাশ্রয়ের খোঁজে মাইজদী পৌর বাজার থেকে রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করছিলেন। তিনি পেঁয়াজ কিনেছেন গত সপ্তাহ থেকে ৫ টাকা বেশি কেজি দরে, যা দত্তেরহাট ও সোনাপুরে তার বাসার পাশের মুদি দোকানে ১০-১২ টাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। ছোলা, ডাল, আদা, রসুন, মুরগিসহ নানান পদের কেনাকাটায় কেজি প্রতি ৮-১২ টাকা করে সাশ্রয় করতে পেরেছেন তিনি।

লোকমান হোসেন বলেন, “সব পণ্যের দাম এত চড়া যে কেবল মাত্র সবজিতে দাম সহনীয়। অপরগুলোতে কেজিতে ৫-১০ টাকার সাশ্রয় হওয়ার কথা থাকলে ও আমরা সে সুযোগ পাচ্ছিনা। এটা আমার মত সীমিত আয়ের মানুষের জন্য অনেক বড় কিছু। এজন্যই কষ্ট করে এই বাজারে আসা।”
রমজান ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে লোকমানের অবস্থা তার মতো সীমিত আয়ের লোকেদের দৈনন্দিনের বাজার খরচ মেটানোর সংগ্রামকে তুলে ধরে। গত রমজানের তুলনায় এ বছর রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় ৮টি পণ্য যেমন– পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর, গরুর মাংস, রসুন এবং আলুর দাম ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) মাধ্যমে সারাদেশে জেলায় জেলায় পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে তেল, চিনি, ডালের মত পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম, মনিটরিং, চাঁদাবাজি বন্ধের ঘোষণা, ট্যাক্স ছাড় দিয়ে চিনি, খেজুর আমদানির সুযোগ, স্বল্প মূল্যে মাংস, দুধ ডিম, মাছ বিক্রির উদ্যোগ থাকার পরও বড় একটি ভোক্তা শ্রেণিকে এসব নিত্যপণ্যের জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এর বাইরে ডিম, তেল, ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা চড়া, যেগুলোর ওপর মানুষের নির্ভরতাও বেশি।

আরও পড়ুনঃ   এস আলমের সহযোগী ইসলামী ব্যাংকের ৮ শীর্ষ কর্মকর্তা বরখাস্ত

টিসিবির বাজার বিশ্লেষণে বৃহত্তর নোয়াখালীর খুচরা ও পাইকারি বাজারের তথ্য বলছে– পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, মশুর ডাল, খেজুর ও গরুর মাংসের দাম গত রোজার তুলনায় কিছুটা বেশি। এরমধ্যে পেঁয়াজ কিনতে ১০%, সয়াবিন তেল কিনতে ১৫%, ছোলা কিনতে ১২%, চিনিতে ১১%, ডালে ৮%, একেবারেই সাধারণ মানের খোলা খেজুর কিনতে ৬%, গরুর মাংস কিনতে ৫%, রসুন কিনতে ২৮% এবং আলু কিনতে ৬% বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।

এর বাইরে গত বছরের রোজা শুরু হওয়ার আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২২০-২৩০ টাকার মধ্যে। ৭-১০ দিন আগেও যে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২১৫ টাকার মধ্যে, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগির এক হালি ডিমের দাম একই সময়ের ব্যবধানে ৩৭ টাকা থেকে কমে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অঙ্কের হিসেবে কম মনে হলেও প্রকৃত চিত্র বলছে দাম চড়া।
গরুর মাংসের দাম শুধুমাত্র রোজাকে উপলক্ষে ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম গত বছর ছিল ১৮৫ টাকা, যা এখন অনেক দোকানে খোজ করে পাওয়া ও বিরল। যদিও আšতর্জাতিক বাজারে দাম কমার পর অনেক চাপাচাপিতে এইটুকু সাশ্রয়। খোলা চিনি নিয়ে হইচই গত বছরও ছিল, তখন দাম ছিল কিছুটা সহনীয়। এবারে চিনি নিয়ে হইচইয়ের কমতি নেই, শুল্ক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে আমদানিতে। কিন্তু বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে চিনি।

আরও পড়ুনঃ   শাহজালাল বিমানবন্দরে দুই মানি চেঞ্জারের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

এই যে খরচের চাপ, ভোক্তা সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে– বিষয়টি স্বীকারও করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃৃপক্ষ।

পাইকারি বাজারে গত বছর রোজায় ৯০-১১০ টাকা দামের খেজুর এবারে ১৪০-১৫০ টাকা, যা খুচরা বাজারে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারের ২০০ টাকার কিছুটা ভালো খেজুর ৩৫০ টাকায় এবং ৪০০-৪৫০ টাকার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। রোজায় এ পণ্যটির বেশ চাহিদা রয়েছে এবং বছরের এই এক মাসে খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। পণ্যটির ব্যবসাও এই এক মাস কেন্দ্রিক।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাবে) কর্তৃপক্ষ বলেন, “সরকারের পদক্ষেপ অনেক, কিন্তু সেটার ইফেক্ট কতটা বাজারে পড়ছে, আদৌ সেটা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারছে কিনা সেটা দেখতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ব্যবসায়ীদের এই অভ্যাস দূর করা সম্ভব নয়।”

কর্তৃপক্ষ বলেন, “এখন বাইরে থেকে পেঁয়াজ এনে টিসিবি তাদের পণ্যের সঙ্গে পেঁয়াজ দিতে পারতো তাহলে কিন্তু পেঁয়াজের বাজার কমে আসতো, কিন্তু সেই উদ্যোগ নেই। এভাবে করে ইফেক্টিভ উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি।”-জনকণ্ঠ