ট্রেন চলাচল বন্ধ, মেসেজ না দেয়ায় যাত্রীদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার : ‘ট্রেন বন্ধ ভালো কথা। এই কথা তো আর সব যাত্রী জানে না। আর জানারও কথা না। তাহলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটা মেসেজ দিয়ে বিষয়টা যাত্রীদের জানাতে পারতো। তাহলে যাত্রীদের স্টেশনে এসে অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। যাত্রার আগেই ভাড়া তো ঠিকই নেয়। সেখান থেকে কয়েক পয়সা খরচ করে একটা মেসেজ দিতে পারতো। কিন্তু দেয় না।’

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন বন্ধের কথা শুনে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাসরিন আক্তার নামে এক যাত্রী। তিনি গোপালগঞ্জে যাবেন। তার রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কেনা ছিল।

নাসরিন আক্তারের সঙ্গে রয়েছেন আরেক জন নারী আত্মীয় ও তার ১০ বছরের কন্যা সন্তান। জরুরি প্রয়োজনে তিনি গোপালগঞ্জে বোনের বাসায় যাচ্ছিলেন। সেখানে কয়েকদিন থাকার কথা রয়েছে তার। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মিলে এক ভ্যান লাগেজ নিয়ে স্টেশনে এসে ট্রেন বন্ধের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই নারী।

নাসরিন আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল বিকেল ৩টার ট্রেনে। ট্রেন বন্ধের কথা জানতাম না। স্টেশনে আসার পর শুনছি লোকজনের কাছে ট্রেন বন্ধ। এরপরে টিকিট কাউন্টারে এসে শুনি ট্রেন বন্ধ। মোবাইলে মেসেজও দেওয়া হয়নি। এখন কখন ট্রেন আসবে, আর কখন যাবে তাও বুঝতে পারছি না। এখন স্টেশনে বসে আছি কী করব উপায় নেই।

আরও পড়ুনঃ   মাদকদ্রব্য উদ্ধার সহ নগরীতে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার ১০

তিনি আরও বলেন, ট্রেন বন্ধের বিষয়টি অবশ্যই জানানো দরকার ছিল। আমরা তো হয়রানির শিকার এখন। বাসা থেকে তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে চলে আসলাম। কিন্তু এসে শুনি ট্রেন বন্ধ। আমাদের ফোনে কোনো মেসেজ দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজকের দিনে ট্রেন বন্ধ, কবে ট্রেন চলাচল করবে তাও বলা হয়নি। ট্রেন বন্ধের কথা জানলে তো আমরা বাসা থেকে বের হতাম না।

নাসরিন আক্তারের মতো রাকিবুল ইসলাম নামে এক কলেজছাত্র বলেন, এটা নিছক হয়রানি ছাড়া কিছু না। রেলওয়ের কর্মীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে, থাকতেই পারে। তারা দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু ট্রেন বন্ধের বিষয়টি প্রত্যেক যাত্রীকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এর ফলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পাড়তে হয়েছে স্টেশনে এসে।

সালেহীন নামে আরেক যাত্রী বলেন, অনেকেই গাড়ি ভাড়া করে স্টেশনে এসে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আবার কারও কারও জরুরি থাকায় বিকল্প যাত্রীবাহী বাসে উঠে গন্তব্যে ছুটছেন। উপায় নেই, ট্রেন বন্ধ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে জানাতেও পারছে না ট্রেন কখন, কবে চালু হবে। সব মিলিয়ে এক ধরনের সমস্যায় পড়েছে যাত্রীরা।

এদিকে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে রাজশাহীর কোনো ট্রেন ছাড়েনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। হঠাৎ রেলের স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন না ছাড়ায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বিক্ষুব্ধ হয়ে যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন। স্টেশনে যাত্রীদের বসার জন্য থাকা চেয়ারগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   পুকুর ভরাট বন্ধ, সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে- রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে তিতুমীর এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসসহ কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি।

দুপুর আড়াইটার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে আছে লোকাল ও আন্তনগর ট্রেনগুলো। স্টেশনের ভেতরে অল্প কিছু যাত্রী দেখা গেছে। যে যাত্রীগুলো ট্রেন বন্ধের খবর জানেন না, তারাই মূলত এসেছেন স্টেশনে। আবার ফিরেও যাচ্ছেন।

স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এছাড়া স্টেশনের বেশ কয়েকটি টিকিট কাউন্টার খোলা রয়েছে। সেখানে কাউন্টারের বিক্রি হওয়া টিকিটগুলোর টাকা ফেরত পাচ্ছেন যাত্রীরা।

নুপূর ইসলাম নামে একজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ট্রেন বন্ধ। টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনে শুধু কাউন্টারে কেনা টিকিটের টাকা পাচ্ছেন যাত্রীরা। অনলাইনে কেনা টিকিটের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। সেই টাকা কবে দেবে সেটিও সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না।

এখনো রিফান্ড করা হয়নি। টিকিট অনলাইনে আর কাউন্টারে যে ভাবেই কেনা হোক না কেন, টাকা তো রেলওয়ে পেয়েছে। তাহলে যাত্রীদের টাকা ফেরত দিতে সমস্যা কিসের। এ বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার শহিদুল আলমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।