রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চে বেহালা-বাঁশির সুর ঝংকার

স্টাফ রিপোর্টার : শুরুতেই হাওয়াইন গিটারে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানের সুর উঠল। রাজশাহীর মাহফিজুর রহমানের হাওয়াইন গিটারের এই সুর দর্শক-শ্রোতাদের গভীরে নিমগ্ন করে। তারপর দোতারার সুর নিয়ে এলেন রাজশাহীর আবদুল মান্নান ও তাঁর দল।

এরপর একে একে জয়পুরহাটের মো. রাকিবুলের বেঞ্জু, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রমজান আলীর বাঁশি, রাজশাহীর জিল্লুর রহমানের সরোদ, আহনাফ মুনতাসিরের পিয়ানো, দীনবন্ধু পালের পাখোয়াজ, মীর শাহরিয়ার সুলতানের বেহালা, নওগাঁর শুভ সরকারের বাংলা ঢোল বিমোহিত করল সবাইকে। একক ও সমবেত পরিবেশনার সুরের ঝংকার নীরবতা আনে দর্শকদের মাঝে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চে এই যন্ত্রসংগীত উৎসবের আয়োজন করে। দেশের সাত বিভাগেই এ উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। পঞ্চম আসর হিসেবে আজ রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে এই আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পদ্মাপারে ঘুরতে যাওয়া মানুষ বিকেল থেকেই মঞ্চের সামনে বসে থাকেন। তাঁদের অপেক্ষা শেষ হয় সন্ধ্যার পর।

আরও পড়ুনঃ   আরইউজের সদস্য হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান

আয়োজনে সহযোগিতা করে জেলা প্রশাসন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আলী রায়হানের বাবা মুসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনের সময় পিছপা হয়নি। আপনারাও কখনো পিছপা হবেন না। আমার ছেলে স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আপনারাও রুখে দাঁড়াবেন।

উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। এই বাংলাদেশ হতে হবে বৈষম্যহীন। ওপরতলায় বসে কেউ নিচতলাকে শাসন করবে তা হবে না। আর কোনো সরকার যেন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে, সেটা আমাদের দেখতে হবে।

মেহজাবীন রহমান আরও বলেন, আমরা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে জনবান্ধব সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এ জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে যন্ত্রসংগীত উৎসবের আয়োজন করেছি। এরপর আমরা জেলায় জেলায় যাব। প্রত্যন্ত গ্রামে যাব, নদী পার হয়ে যাব। আমাদের প্রান্তিক শিল্পীরাও যে কতটা দক্ষ তা তাদের কাছে গিয়ে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

আরও পড়ুনঃ   নগরীতে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও গ্রেপ্তার ১২

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার। তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে কতটা সাহসী, দুর্বার ও দুর্দান্ত তা আমরা দেখেছি। তারা যেন আমাদের সংস্কৃতিকে অনুভব করতে পারে, সে জন্য এই আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমি দেশব্যাপী এমন আয়োজন করেছে বলে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা কালচারাল অফিসার শাহাদৎ হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।