গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল : অ্যামনেস্টি

অনলাইন ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় ১৪ মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

উঠেছে গণহত্যার অভিযোগও। এমন অবস্থায় ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গাজায় চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যদিও এই ধরনের অভিযোগ ইসরায়েলি নেতারা বারবারই অস্বীকার করেছেন।

লন্ডনভিত্তিক এই মানবাধিকার গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা কয়েক মাস ধরে ঘটনা পর্যবেক্ষণ এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

রয়টার্স বলছে, নাৎসি হলোকাস্টে ইহুদিদের গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনে গণহত্যাকে “একটি জাতীয়, জাতিগত, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত কাজ” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   ব্রাজিলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৩৮

তবে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ইহুদিবাদী এই দেশটির দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে গাজায় হামলা চালাচ্ছে। অবশ্য অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলেও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

দ্য হেগে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে বলে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তটি “হালকাভাবে, রাজনৈতিকভাবে বা অগ্রাধিকারমূলকভাবে” নেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদন উপস্থাপনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে (গাজায়) একটি গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। ছয় মাস ধরে গভীর গবেষণার পর আমাদের মনে কোনও সন্দেহ নেই, একটুও সন্দেহ নেই।”

অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, ইসরায়েল এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনে নিষিদ্ধ পাঁচটি কাজের মধ্যে অন্তত তিনটি করেছে, যার মধ্যে হত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিসাধনের মতো বিষয়ও রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   মধ্যপ্রাচ্যে ঈদ হতে পারে ১০ এপ্রিল

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।