ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

অনলাইন ডেস্ক : লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদিত হওয়ার পর পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়ে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় ইসরায়েলের মিত্র দেশ দুটি। খবর আল জাজিরার।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন হয়। বুধবার (২৮ নভেম্বর) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইসরাইলি টিভি নেটওয়ার্ক চ্যানেল ১২-এর বরাতে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

এ চুক্তির মধ্যদিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সংঘাতে হাজার হাজার সামরিক ও বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতিকে ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তিনি বলেন, ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। এখন এই চুক্তির উদ্দেশ্য শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।

বাইডেন বলেন, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানিজ সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে। চুক্তিটি ভঙ্গ হলে ইসরাইল তার আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করবে।

আরও পড়ুনঃ   টাটা ট্রাস্টের দায়িত্ব পেলেন রতন টাটার সৎভাই

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি বেসামরিক জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দেবে।

তিনি দীর্ঘ সময় ধরে শত্রুতা বন্ধ করার প্রশংসা করেন এবং যুদ্ধবিরতিকে ‘লেবাননে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে পরিণত’ করার আহ্বান জানান।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করারও আহ্বান জানিয়েছেন স্টারমার। এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগোতে হবে। সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার ওপর থেকে বিধিনিষেধ অপসারণ করতে হবে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার অজুহাতে গাজায় বড় ধরনের সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। একই সময়ে লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গেও সংঘাত শুরু হয় তাদের।

প্রথমে থেকে থেকে সংঘর্ষ হলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে লেবাননে বিমান হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। এরপর অক্টোবরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী এবং হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করে।

হিজবুল্লাহও পাল্টা জবাব দেয়। এর মধ্যদিয়ে যুদ্ধ নতুন রূপ নেয়। সংঘাতের শুরু থেকেই একটা যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চেষ্টা চলছিল। তবে এতদিন তা সফল হয়নি। এতে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও হতাহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

আরও পড়ুনঃ   ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, শত শত মানুষ আহত

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যুদ্ধবিরতি কার্যকরে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে হিজবুল্লাহ ও লেবানন সরকার। কয়েকদিন রোববার (২৪ নভেম্বর) প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতি জানায় ইসরায়েল। এদিন রাতে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকের পর সম্মতি জানান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন নেতানিয়াহু। বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা চুক্তি কার্যকর করবো। তবে চুক্তির কোনো লঙ্ঘন হলে জোর প্রতিক্রিয়া জানাবো।

নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পূর্ণ সমন্বয় সাপেক্ষে আমরা সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখবো। তবে যদি হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করে বা ফের সশস্ত্র হওয়ার চেষ্টা করে, আমরা আঘাত করবো।

তিনি দাবি করেন, হিজবুল্লাহ ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার সময় যতটা শক্তি ছিল এখন তার তুলনায় যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে।