স্টাফ রিপোর্টার : সকাল-সন্ধ্যায় ঘন কুয়াশার হাত ধরে প্রকৃতিতে নামছে শীত। গত কয়েকদিন থেকে শীত অনুভূতি হচ্ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গরম কাপড়ের কেনাকাটাও। এবারের শীতে উষ্ণতা ছড়াতে নিম্ন-মধ্যবিত্তের ভরসা ফুটপাত মার্কেট।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) নগরীর সাহেববাজার, কোর্টবাজার, রেলগেট, আলুপট্টি, তালাইমারি, উপশহর এলাকাসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের মোড়গুলো ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতে ও ভ্যানের উপর শীতের কাপড় বেচাবিক্রি বেশ জমে উঠেছে। ঘিরে ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ পোশাক কিনছেন।
এদিন নগরীর সাহেববাজারের আরডিএ মার্কেট, জলিল সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এখানকার দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম নেই। বেশকিছু দোকান বন্ধও পাওয়া যায়। পোশাকের দামও এখানে বেশি।
ক্রেতারা বলছেন, এবার শীতের প্রত্যেকটা পোশাকের দাম বেড়েছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়ে নি। এরমধ্যে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ফুটপাতকেই বেছে নিচ্ছেন। সাধ থাকলেও সাধ্যের কাছে তারা অসহায়- এমন মন্তব্যই করছেন ক্রেতারা।
এদিন সাহেব বাজারের মনিচত্বর থেকে শুরু করে বোয়ালিয়া থানা মোড় পর্যন্ত ফুটপাতের দু’ধারে পোশাকের দোকান বসতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর প্রত্যেকটি দোকানে ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। যেখানে ২০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই-৩ হাজার টাকা দামের শীতের কাপড় ও শীতের কম্বল কেনাবেচা হচ্ছে।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহের একদিন শুক্রবারে ফুটপাত মার্কেটে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়।
আর শীতের জন্য এখন বেচাবিক্রি বেশি। ফুটপাত মার্কেটেও পোশাকের দাম বেড়েছে। তবে অস্বাভাবিক নয়। নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষরা এখান থেকেই বাজার করছেন। আর নগরীতে শুক্রবার বেশির ভাগ বিপণিবিতান বন্ধ থাকে। বিশেষ করে জামাকাপড়ের বড় বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকায় বিক্রয়কর্মী ও কর্মচারীরা এক দিনে ছুটি কাটানোর বদলে ব্যবসা করেন। বিপণিবিতানের বিক্রি না হওয়া পোশাক কিংবা ঢাকা থেকে আনা কম দামি পোশাক নিয়ে ফুটপাতে এক দিনের জন্য তারা বিক্রি করেন। এ জন্য ভোরের দিকে এসে তাদের দোকানের জায়গা দখলে নিতে হয়। বিক্রি চলে রাত ১০ পর্যন্ত। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ বিপণিবিতানে কাজে নিয়োজিত থাকেন।
সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ক্রেতাদের ডেকে ডেকে কাপড়ের দাম হেঁকে বিক্রি করছিলেন মো. মুন্না। তিনি নগরের আরডিএ মার্কেটের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী। মুন্না বললেন, সপ্তাহে শুক্রবার তাদের ছুটির দিন। কিন্তু এই দিনটি ছুটি না কাটিয়ে তারা ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করেন। তাদের এখানে ছোট-বড় সবার জামাকাপড় পাওয়া যায়। দামও সাশ্রয়ের মধ্যেই।
মো. সোহেল নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ছুটির দিনে এখানে শীতকালে ব্যবসা জমে বেশি। রাতের দিকে রাজশাহীতে শীত পড়ছে। এ কারণে মানুষ শীতের জামাকাপড় কেনা শুরু করে দিয়েছেন। শীত বাড়লে আরও বিক্রি বেড়ে যাবে। শুক্রবার এখানে কয়েকশো দোকান বসে। কম করে হলেও এখানে ৩০-৩৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়।
আরিফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী ফুটপাতে শীতের পোশাক কিনছিলেন। তিনি বলেন, ফুটপাতে পোশাক একটু বেছে নিলে ভালো পাওয়া যায়। দামও অনেকটা সাশ্রয়ী। এই পোশাকগুলোই শো-রুম বা ভালো দোকানে কিনতে গেলে কয়েকগুন দাম নিবে।
আরেক শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমি আরডিএ মার্কেটে গিয়ে একটা হালকা শীতের পোশাক খুঁজছিলাম। সেখানে যে পোশাকটা ৫০০ টাকা দাম বলেও দেয় নি, একই পোশাক ফুটপাতের বেশকিছু দোকান খুঁজে আড়াইশো টাকায় কিনলাম। আমারা শিক্ষার্থী। জীবনযাপনের অস্বাভাবিক ব্যয়ে এরইমধ্যে নাভিশ্বাস উঠছে। একারণে বাধ্য হয়েই ফুটপাতের দিকে নজর দিতে হচ্ছে।
ফুটপাতে মেয়ের জন্য শীতের কাপড় কিনছিলেন অটো রিকশা চালক সুরুজ মিয়া। তিনি বলেন, এখন দিনে ৫০০ টাকাও আয় করতে পারি না। কিন্তু পরিবারের ব্যয় অত্যাধিক হারে বেড়েছে। এরইমধ্যে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছি। মেয়ের বায়না ভালো দোকানে যাবে। কিন্তু এখন তো সেটা পারছি না। তাই ফুটপাতেই একটু ভালো দেখে দুইটা পোশাক কিনলাম।
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সেকেন্দার আলী জানান, ছুটির দিনে বিপণিবিতানের মূল ক্রেতারা আসেন না। কিন্তু একটু নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে আসেন। যারা ফুটপাতে বিক্রি করেন, তাদের লক্ষ্যও নিম্ন আয়ের লোকজন। এটা ইতিবাচক।