ভিসি কর্মকর্তা আছেন, শিক্ষার্থী নেই নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের

নওগাঁ প্রতিনিধি: দুই বছর পার হলেও উপাচার্য (ভিসি) এবং কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়া কোনো অগ্রগতি নেই নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুরু হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম। স্থান নির্ধারণের কাজও চলছে নানা জটিলতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে এমন ধীরগতিতে হতাশ এই অঞ্চলের শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষাবিদেরা। সংকট কাটিয়ে দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি তাঁদের। স্থানীয়রা বলছেন, উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালে নওগাঁর এক জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল পাস হলে সে প্রত্যাশার অনেকটাই পূরণ হয়। তবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশ তাঁরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সারের ৮ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিতরসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সে সময় দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও নিয়োগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ   শেখের বেটি মৃত্যুকে ভয় করে না: খাদ্যমন্ত্রী

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম স্বল্পপরিসরে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর দ্বিতীয় উপাচার্য (উপাচার্য) হিসেবে যোগ দিয়েছেন ড. মো. হাছানাত আলী। স্থানীয় শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়াটা আমাদের জন্য হতাশজনক। এ ছাড়া নওগাঁর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস কোথায় স্থাপিত হবে। শুনেছি স্থান নির্ধারণের জটিলতায় সেটিও থমকে রয়েছে, যা কিছু হোক কেন, আমরা দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছি।’ আরেক শিক্ষার্থী রিপন মন্ডল বলেন, ‘নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। জোর দাবি জানাই, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হোক।’ এদিকে দুই বছরেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় শিক্ষাবিদেরাও হতাশার কথা জানিয়েছেন। নওগাঁ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘জেলায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হয় তখন নওগাঁর মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত এবং আশান্বিত ছিলেন। তখন ধারণা করেছি, দ্রুতই নওগাঁয় উচ্চশিক্ষার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। কিন্তু এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। যত দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু করা যায়, ততই ভালো।’ নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মানেই গবেষণার একটি ক্ষেত্র। এখানে শুধু নওগাঁ নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হলে নওগাঁকে নিয়ে গবেষণার সুযোগ হবে। কিন্তু ক্লাস শুরু না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস শুরু হওয়া উচিত।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নবনিযুক্ত উপাচার্য (ভিসি) ড. মো. হাছানাত আলী বলেন, ‘যোগদানের পরই ইউজিসির কাছে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছি। এখন ইউজিসির অনুমোদনের অপেক্ষা। অনুমোদন পেলেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে। আর যোগাযোগব্যবস্থাসহ সবদিক বিবেচনা করে স্থান নির্ধারণের কার্যক্রমও অনেকটা এগিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে সেটি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেই শিক্ষা কার্যক্রম চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভিসি।