মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফজলুর রহমান খান মারা গেছেন

অনলাইন ডেস্ক : একুশে পদকপ্রাপ্ত, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক (৮৯) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের নিজ বাসায় তিনি মারা যান।

মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বাবর, পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মোশারফ হোসেন মনি জানান, ফজলুর রহমান খান ফারুক ১৯৪৪ সালের ১২ অক্টোবর ০৭ নং ওয়ার্শি ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল হালিম খান এবং স্ত্রীর নাম সুরাইয়া বেগম। তিনি মির্জাপুরের কহেলা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণীর পাসের পর টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৩ সালে সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে আই.কম, ১৯৬৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৯৬৭-১৯৭৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন।

১৯৬০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন ফজলুর রহমান খান। ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুনঃ   কলেজ অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে

৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ফজলুর রহমান খান ফারুক। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের সাটিয়াচড়ায় সম্মুখ যুদ্ধে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের সর্বাধিনায়ক। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে টাঙ্গাইল-০৭ (মির্জাপুর) আসনের এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে টাঙ্গাইল জেলা বাকশাল এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৮৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ২০১৭ সাল থেকে পর্যন্ত তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ   চালের দাম কবে কমবে জানালেন খাদ্য উপদেষ্টা

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক পান। তিনি মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ওয়ার্শি উচ্চ বিদ্যালয়, মির্জাপুর প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। টাঙ্গাইলের রাজনীতি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াঙ্গনেও ছিল তার অগ্রণী ভূমিকা। একাধারে তিনি রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ বহু প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।

মহান এই ব্যক্তির মৃত্যুতে টাঙ্গাইলসহ মির্জাপুরবাসী শোকাহত। বাদ আসর টাঙ্গাইল গোরস্থান জামিয়া ইসলামিয়া দারুস-সুন্নাহ মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঐ মাদ্রাসার গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ফজলুর রহমান খান ফারুকের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল বিডি লিমিটেডের শিক্ষা পরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল প্রতিভা মুৎসুদ্দি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুর রহমান সহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সাধারণ মানুষ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।-ইত্তেফাক