স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে খাদ্যের ভেজাল প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগারের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’র আওতায় এই ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগারের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
এবিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর সোনার দেশকে জানান, রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন নগরী। ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে প্রথম হয়েছে রাজশাহী। এই নিরাপদ নগরীর জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ খাদ্য পরীক্ষাগারের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতিমাসে ভ্রমণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় আগামী ৯ অক্টোবর থেকে রাজশাহীসহ এই বিভাগের আটটি জেলায় প্রযুক্তির ব্যবহার করে খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে এবং মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগারের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগারে- মাইক্রোস্কোপ, অটোক্রেড, ইনকিউবেটর, এটিপি সোয়াব টেস্ট, কলোনি কাউন্টার, সেন্ট্রিফিউজ, ভরটেক্স, টঠ স্পেকট্রোফটোমিটার, হিট সেন্সরসহ মোট ১৬ টি যন্ত্রপাতি এবং পরীক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যালের সাহায্যে পাউরুটি, মধু, দুধ, ঘি, মাখন, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, বিভিন্ন মশলার গুঁড়া, বিভিন্ন প্রকারের ডাল, ভোজ্য তেল, নারিকেল তেল, সবুজ শাক-সবজি, আইসক্রিম, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পণ্যের ৩৭টি সেফটি প্যারামিটার পরিবীক্ষণ করে ৩০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল দেওয়া সম্ভব।’
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার প্রত্যয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। আগে পরীক্ষাগার ছিল একটা স্থায়ী জায়গায়। এখন মোবাইল ল্যাবরেটরি ভ্যানের মাধ্যমে পরীক্ষাগারের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে।’
এবিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রাজশাহীর নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, বিভিন্নভাবে খাদ্যে ভেজাল ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ এ খাবার গ্রহণ করছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। পাউরুটি, মধু, দুধ, ঘি, মাখন, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, বিভিন্ন মশলার গুঁড়া, বিভিন্ন প্রকারের ডাল, ভোজ্য তেল, নারিকেল তেল, সবুজ শাক-সবজি, আইসক্রিম, মিষ্টি জাতীয় খাদ্যপণ্যে দেওয়া হচ্ছে ভেজাল। মধুতে মেশানো হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইনভার্ট সুগার সিরাপ, দুধে মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া, হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড, ডিটারজেন্ট,
স্টার্চ, অ্যান্টিবায়োটিক, সোডিয়াম বেনজোয়েট এবং বেনজোয়িক আসিড; পাউরুটিতে পটাশিয়াম ব্রোমেট; ঘি তে মেশানো হচ্ছে ডালডা, উদ্ভিজ তেল, ক্ষতিকারক রঙ; হলুদের গুঁড়ায় মেশানো হচ্ছে ময়দা, চক পাউডার, ক্ষতিকারক রঙ; মরিচের গুঁড়ায় ইটের গুঁড়া ও ক্ষতিকারক রঙ ইত্যাদি। বিভিন্ন খাদ্যপণ্য অনিরাপদ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের চাষাবাদে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কীটনাশক নানাভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলছে। দেখা দিচ্ছে ফুসফুস ক্যানসার, লিউকেমিয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা। খাদ্যপণ্য বাজারজাত করার সময় খাদ্য দূষিত করে। বিক্রেতা ভালো পণ্যের সঙ্গে ভেজাল পণ্যের মিশ্রণ ঘটিয়ে খাদ্যের দূষণ ঘটায়। এই দূষণ রোধ করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
তিনি আরো জানান, অটোক্লেভ ও ভর্টেক্স মেশিন খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিতকরণের পরীক্ষা। এই ভ্রাম্যমাণ খাদ্য পরীক্ষাগারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক সেইফটি প্যারামিটার পরিবীক্ষণ করা সম্ভব হবে। নিরাপদ খাদ্য মোবাইল ল্যাবরেটরি খাদ্যের নিরাপদতা বৃদ্ধিতে একটি কার্যকরি ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল ল্যাবরেটরি খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি খাদ্য সুরক্ষা পরীক্ষা, উৎপাদকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্য পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে আমরা খাদ্য নিরাপদতার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারি। অনিরাপদ খাদ্য কৃষক, ব্যবসায়ী, ভোক্তা সবার জন্যই ক্ষতিকর। খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।