দেশে ফিরতে প্রধান উপদেষ্টাকে খোলা চিঠি তাসলিমার

অনলাইন ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি লিখলেন তসলিমা নাসরিন। গত সোমবার খোলা চিঠিতে তসলিমা, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাতের বর্ণনা দেন, যেখানে বিতর্কিত লেখিকাকে দেশে ফেরার কথা বলেছিলেন তিনি।

তসলিমা লেখেন- আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দুবার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। উইমেন্স ফোরামের প্রোগ্রামে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে। আমি সম্ভবত কী-নোট স্পিকার ছিলাম সেবার। আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ। আপনি বার বার বলছিলেন, ‘দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন’। আমি বলেছিলাম, ‘কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না দেশে’। আপনি বলেছিলেন, ‘যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’। আমি দুঃখ করে বলেছি, ‘আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউও করে না’। আপনি বলেছিলেন, ‘রিনিউ করবে না, বললেই হলো? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন তো!’ আমি বলেছিলাম, ‘আপনি তাহলে চেষ্টা করুন। সরকারকে বলুন। আপনি বললে নিশ্চয়ই হবে।’ আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি চেষ্টা করবেন। আজ বহু বছর পর জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি আমাকে দেশে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন? সরকারকে বলেছিলেন আমার সম্পর্কে কিছু? হয়ত তখন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুনঃ   সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন : প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান

কিন্তু এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, ‘কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন’? আগের মতো কি বলবেন না ‘ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই’? বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব।

আরও পড়ুনঃ   আশা করছি, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নাকি ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদী, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়?’

আপাতত দিল্লিতে বসবাস করেন তসলিমা। ২০০৪ সাল থেকে টানা তিন বছর পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন তিনি।