বৈষম্যবিরোধী গ্রাফিতিতে সেজেছে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন দেয়াল

স্টাফ রিপোর্টার: গত জুলাইয়ের দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি অঙ্কনের মাধ্যমে স্মৃতিতে ভাস্বরকরে রেখেছে রাজশাহী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

‘শোনো মহাজন- আমি নয়তো একজন’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট’, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’,‘রুখে দাও ষড়যন্ত্র’- এমন নানা স্লোগান সম¦লিত গ্রাফিতিতে সেজেছে রাজশাহীর বিভিন্ন সড়কের দেয়াল। দল বেঁধে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই চাঁদা তুলেএ গ্রাফিতিগুলো অঙ্কন করেছে।রংতুলির আঁচড়ে শিক্ষার্থীরা মেলে ধরেছে তাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়, যেখানে থাকবেনা কোনো বৈষম্য।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহিদ আবু সাঈদের পুলিশের গুলির মুখে দ্বিধাহীন চিত্তে নিজের বুক পেতে দেওয়ার গ্রাফিতিতে উজ্জ্বল রাজশাহীর সড়ক দেয়াল। শহিদ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে পানি সরবরাহ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রাক্তন শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। এ সময় তার ‘পানি লাগবে? পানি’ এ উক্তি সম্বলিত প্রাফিতিও দেখা গেছে শহরের বিভিন্ন দেয়ালে।

আরও পড়ুনঃ   সিরাজগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

নগরীর বিভিন্ন সড়কে ও মোড়ে নর্দান মোড়, তালাইমারী, কাজলা গেট, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় গেট,আনসার ক্যাম্প, রাজশাহী কলেজ, মহিলা কলেজ, সিএন্ডবি মোড় থেকে সার্কিট হাউস সড়ক প্রভৃতি স্থানে গ্রাফিতিতে তরুণরা দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। নব প্রভাতের অরুণ আলোর মত এই গ্রাফিতিগুলো যেন হয়ে উঠেছে শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের পাশে অনেক পুরনো ও ভাঙ্গা দেয়াল শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি আঁকার প্রয়োজনে পরিষ্কার ও মেরামত করেছে। এতে করে নগরীর সড়কগুলোর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্রাফিতি অঙ্কনের অনুপ্রেরণরা কথা বলতে গিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, কলম তরবারির চেয়েও শক্তিশালী এবং দেশে মেধার বিজয় হয়েছে, সেটাইআমরা দেয়ালে দেয়ালে রাঙিয়েছি। দুই দিন ধরে আমরা এখানে কাজ করছি। দেশকে আবার নতুনভাবে সাজানোর জন্য আমরা কাজগুলো করছি।

আরও পড়ুনঃ   রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চে বেহালা-বাঁশির সুর ঝংকার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সীমানাপ্রাচীরে অঙ্কিত একটি গ্রাফিতিতে দেখা গেছে একটি শিশু তার বাবাকে উচ্ছ্বসিত হয়েআকাশে উড়ন্ত হেলিকপ্টার দেখাচ্ছেঅথচ সেই একই হেলিকপ্টার থেকেইতাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। এর পাশেই আঁকা হয়েছে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ এর গ্রাফিতি যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী বলেছে, ‘আমরা এ গ্রাফিতিতে ব্যাকগ্রাউন্ডেসবুজ রং দিয়েছি, যা আমাদের সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভাবনার এক নতুন সূর্য উদিত হয়েছে ।’

গ্রাফিতির সবগুলোই যে দক্ষ হাতে আঁকা তা নয়, অনেক কচি হাতের অদম্য প্রচেষ্টাও দেখা গেছে নানা দেয়ালে। সেগুলো হয়তো দেখতে অতোটা সুন্দর হয়নি কিন্তু তাদের মনের আকুতি প্রকাশে সে গ্রাফিতিগুলো যে সফল সে বিষয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নেই।