চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা, ঘটনার আগে যা যা করেন অভিযুক্ত

অনলাইন ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় কলকাতা পুলিশ আগেই এক জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই অভিযুক্তের ভবানীপুরের বাড়িতে গেলেন তদন্তকারীরা। তার আগে তারা গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে। সেখানেই অভিযুক্তের ‘ডেরা’ ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ব্যারাক থেকে অভিযুক্তের বাড়ি ঘুরে তদন্তকারীরা সিজিও দপ্তরে ফিরে যান।

এছাড়া, আরজি কর হাসপাতালে প্রবেশের আগে ওই অভিযুক্ত কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন সে বিষয়গুলোও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে সামনে এসেছে।

শনিবার (১৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি কর মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার হয়। তাকে ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এক জন, যিনি কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করতেন।

সিবিআই সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের আগের দিন অর্থাৎ ৮ আগস্ট থেকে অভিযুক্তের গতিবিধি কী ছিল, তা জানতেই তার ভবানীপুরের বাড়িতে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেখানে তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

আরও পড়ুনঃ   ইউক্রেনে হাসপাতালে হামলা রাশিয়ার, নিহত অন্তত ১০

শনিবার সকালে কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে গিয়েছিল সিবিআই। সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জানা গেছে, ঘটনার পরে অভিযুক্ত যখন ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে পৌঁছান, তখন তার আচরণ কেমন ছিল, তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরে আরজি কর থেকে ওই ব্যারাকে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত। সেখান থেকে ৯ আগস্ট রাতে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে আগে আরও জানা গিয়েছিল, ৮ আগস্ট রাত ১১টা নাগাদ আরজি করের সিসি ক্যামেরায় অভিযুক্তকে দেখা যায়। তখন তিনি হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবার বেরিয়ে যান। বাইরে কোথাও তিনি মদ খেয়েছিলেন বলে জানতে পারেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা। পরে আবার হাসপাতালে ফেরেন।
জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হলের কাছে সিসি ক্যামেরায় তাকে দেখা যায় ভোর ৪টা নাগাদ। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর সেখান থেকে আবার বেরিয়ে যান অভিযুক্ত।

আরও পড়ুনঃ   ইসরায়েলের রাফাতে স্থল অভিযান হবে ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়’: জাতিসংঘ

সিবিআই সূত্রে খবর, ৮ আগস্ট রাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যৌনপল্লিতে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত। তার সঙ্গে এক বন্ধুও ছিলেন। তবে, যৌনপল্লিতে গিয়ে অভিযুক্ত কেবল মদ খেয়েছিলেন বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন। সেখান থেকে আবার আরজি করে ফেরেন তিনি। তার পরেই চারতলার সেমিনার হলে এই ঘটনা ঘটে।

গত মঙ্গলবার এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। অভিযুক্তকে তারপর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরোনো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ঘিরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশ থেকে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিলোপের লক্ষ্যে বুধবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসের রাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ পালনের ঘোষণা দেন দেশটির নাগরিকরা। ‌‘মেয়েরা রাত দখল করো’ নামের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ভারতজুড়ে পালন করার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। ইতোমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু হয়েছে।