স্টাফ রিপোর্টার: কারফিউ শিথিল হলেও রাজশাহীর হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। ক্রেতা সঙ্কটে ভূগছেন হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা। পরিস্থিতি এমন যে, ব্যবসা শতকরা বিশ ভাগে নেমে এসেছে। ক্রেতা সঙ্কটে অনেকেই এখনো চাইনিজ রেস্তোরা বন্ধ রেখেছেন। যদিও রাজশাহী মহানগরীতে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর পরই দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রেতারা রেস্তোরামূখী হচ্ছেন খুব কম। সাধারণত সন্ধ্যার পরই জমে চাইনিজ রেস্তোরাগুলো। খাবার হোটেলগুলোতে কিছুটা লোকজন আসলেও সেগুলোতেও ব্যাপক হারে কমেছে ব্যবসা। ক্রেতা সঙ্কটের কারণে যেসব হোটেলে এসি চালানো হতো, খরচ কমাতে সেগুলোতে দিনের অধিকাংশ সময় এসি বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এদিকে, বাইরে থেকে লোকজন কম আসায় আবাসিক হোটেল ব্যবসাতেও নেমেছে ধ্বস। সেখানেও শতকরা ২০-২৫ ভাগে নেমে এসেছে ব্যবসা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে যে, কর্মচারীদের বেতন দিতেও পারছেন না ঠিকমতো তাঁরা। এর ওপর আছে ভাড়া থেকে শুরু করে আনুসাঙ্গিক খরচ। প্রতিদিন লোকসান গুনতে গুনতে অনেকের মাথায় হাত পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর ক্রেতাদের মধ্যে অনেকটা জনিপ্রিয় খাবার হোটেল বলে পরিচিত রহমানিয়া, চিলিস, ডালাস, তৃপ্তি, অতিথি, বিন্দুসহ বিভিন্ন খাবার হোটেল খোলা থাকলেও প্রতিটি হোটেলের খাবারের টেবিলগুলো ছিল অনেকটায় ফাঁকা। রহমানিয়া হোটেলে খেতে আসা আসগার আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ম্যাসে থাকি। একটি কম্পানীতে চাকরি করি। তাই দুপুরের খেতে এসেছি। তবে এই হোটেলে আগে যেরকম ভিড় দেকা যেত, আজ অনেকটাই ফাঁকা লাগছে।’
হোটেলের মালিক রিয়াজ খান বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে কারফিউ থাকায় সন্ধ্যার পর পরই হোটেল বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এ কারণে সন্ধ্যার পরে কোনো ব্যবসা হচ্ছে না। আবার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রাজশাহী শহর অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। যার ফলে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ব্যাপক ধ্বস নেমেছে। কারফিউয়ের আগে দিনে ৩০ হাজার টাকা ব্যবসা হলে এখন হচ্ছে ৫-৭ হাজার টাকা। ক্রেতারা আসছে না তেমন।’
রাজশাহীর নানিকিং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট মালিক এহসানুল হুদা ডুলু বলেন, ব্যবসা বিশ ভাগেরও নিচে নেমে গেছে। সন্ধ্যার পরে কারফিউ চালু থাকায় মানুষ আতঙ্কে তেমন বের হচ্ছে না। ফলে চাইনিজ ব্যবসাও কমে গেছে। এ অবস্থায় রেস্টুরেন্টের কর্মচারীদের বেতনই ঠিকমতো দেয়া যাচ্ছে না। এর ওপর আছে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুসঙ্গিক নানা খরচ। অবস্থা এমন যে বন্ধ রাখলেই এর চেয়ে ভালো হয়। কিন্তু সেটিও করতে পারছি না। বন্ধ রাখলে আগামীতে আরও বড় ক্ষতি হবে ভেবে।’
রাজশাহীর ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কারফিউয়ের কারণে রাজশাহীর বাইরে থেকে তেমন লোকজন আসছে না। ফলে আবাসিক হোটেল ব্যবসা প্রচণ্ড মন্দা দেখা দিয়েছে। এখন গড়ে ১০ অতিথিও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খরচ চালানোয় দায় হয়ে পড়েছে।’
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিঙ্কু বলেন, ‘কারফিউ সিথিল হোলেও রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্যে তেমন গতি আসেনি। বিশেষ করে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নেমেছে ধ্বস। এখন গড়ে ২০ ভাগ ব্যবসাও হচ্ছে না। আমার নিজের একটা হোটেল আছে, সেটিও লোকসানের মুখে পড়েছে ক্রেতা না থাকায়।’
তিনি বলেন, মূলত শিক্ষানগরী রাজশাহী ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় এই শঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে বেশি। এর ওপর কারফিউ থাকায় মানুষ সন্ধ্যার পরে তেমন বের হচ্ছে না। যার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি বাড়ছে।’