অনলাইন ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলনে চালানো সহিংসতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের ১০টি হলের ১৫৮টি কক্ষে তান্ডব চালানো হয়েছে। এতে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। আবাসিক হলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। শনিবার এক সাক্ষাৎকারে উপাচার্য এতথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্যাহকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুলকে। তদন্ত কমিটিকে ঘটনার বিবরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং কী করণীয় (সুপারিশ) সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এজন্য কমিটিকে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, আবাসিক হলের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। তাতে দেখা গেছে ১০টি হলের ১৫৮টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় চার কোটি টাকা।
উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টা আগে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও হলগুলোকে বসবাসের উপযোগী করতে হবে। বেশকিছু হল এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে কেউ দেখলে তার মনে আঘাত লাগবে। তাই আমরা চাইনা যে শিক্ষার্থীরা এসে এসব দেখুক। আমরা এসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংসতা ঘটে গেছে এটা খুবই দুঃখজনক। প্রথমে যে আন্দোলন হয়েছিলো কোটা সংস্কারের দাবিতে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিলো। কিন্ত গত ১৬ তারিখে একটা দুর্বিত্তায়ন হয়ে গেলো এখানে। বহিরাগতরা ঢুকে জ্বালাও-পোড়াও করলো ক্যাম্পাসে। আর ১৭ তারিখে আন্দোলনকারীদের সাথে আমাদের তিনদফা বৈঠক হয়েছে। আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা বাইরে গিয়ে জানালো তাদের থেকে মাইক ছিনিয়ে নিওয়া হয়েছে । বহিরাগতরা ঢুকেছে এখানে, তাদের হাতে আন্দোলন নাই। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে খারাপ দিকে যাচ্ছে বিষয়টা।
তিনি বলেন, এদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের অবরুদ্ধ করেননি। আমরা লক্ষ্য করলাম বাইরে থেকে প্রচুর বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হুইছেল বাজিয়ে ঢুকতে শুরু করলো। তারা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে ইলেকট্রিসিটির লাইন কেটে, জেনারেটর বিস্ফোরণের চেষ্টা করে। এতে আমার সাথে থাকা প্রায় অর্ধশত শিক্ষক এবং প্রায় শতাধিক কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তখন আমরা বুঝতে পারলাম তারা নাশকতা করবে। এরপর আমরা বাধ্য হয়ে খবর পাঠালে এখানে থাকা যেীথ বাহিনী আমাদের উদ্ধার করেন ।
তিনি আরও বলেন, এরপরই আমরা লক্ষ্য করেছি যে বিষয়টি আসলে কোটা আন্দোলনে আর নাই, সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ। তারা শুধু এতেই শান্ত হননি। ১৮ তারিখে প্রশাসনের জানাযা পড়িয়েছে। জানিনা কোনো ধর্মীয় বিধানে তা আছে কিনা। তারা তো ধর্মের কথা বলে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে।
উপাচার্য গোলাম সাব্বির বলেন, এবার সন্ত্রাসীরা যে আকারে এসেছে তাদের যে চেহারা আমরা দেখেছি তা আগামীর জন্য খুব আশঙ্খাজনক। সবাইকে অনুরোধ করবো শান্ত হতে । এসকল বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবতে হবে তারা কিভাবে এগোতে চাই। কারণ, বিশ্ববিদ্যলয় মানেই এগিয়ে যাওয়া। আমরা একদিন যদি থেমে থাকি তাহলে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যেতে হবে বহুদূর।