তদবির করা কি পেশা? বিষয়টি বিস্ময়েরই বটে। এক শ্রেণির লোকের অবস্থান আছে যারা তদবিরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন। এটা অবশ্যই পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয় কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেই তদবিরবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং কোনো কোনো এ ক্ষেত্রে তারাও তদবির করে থাকেন। তদবিরের সাথে অর্থনৈতিক যোগ আছেÑপরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে। তবে সব তদবিরকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যের অভাবেও অনেকেই হয়রানি নিপূড়নের শিকার হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
কিন্তু এমন কিছু তদবির আছে যা দুনীর্তির সাথে, জনস্বার্থবিরোধী কাজের সাথে কিংবা রাষ্ট্র পরিপন্থি কাজের সাথে জড়িতদের রক্ষার জন্য। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের নির্মোহ অবস্থানে দৃঢ় থাকাই বাঞ্ছনীয়। নতুবা তা দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থি হবে।
দৈনিক গণধ্বনি প্রতিদিন পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে- কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজশাহী বিভাগে বেশ কয়েকটি স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মামলা করেছে পুলিশ। আবার বেশকিছু মামলাও করেছে ক্ষমতাশীন দলের নেতারা। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই তাদের ছাড়ানোর জন্য তদবির করছেন। তদবিরবাজ এসব নেতাদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান। পত্রিকাটির তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় ৭৫টি মামলা হয়েছে। এর বাইরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ আটটি মামলা করেছে। এসব মামলার এজাহারভূক্ত আসামী আছে প্রায় ১২শো। অজ্ঞাত আসামী আছে কয়েক হাজার। তালিকার নির্দেশনা দিয়ে বিভাগের আট জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) চিঠি দেয়া হয়েছে। এসপিরা আবার এ নির্দেশনা দিয়েছেন থানায় থানায়। তদবিরবাজদের অতীত বিশ্লেষণ করে তাঁদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে তালিকা সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠাবে পুলিশ।
সন্দেহ নেই কাজটি কঠিন, আবার অসম্ভবও কিছু নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে খুবই সম্ভব। আর এই সিদ্ধান্ত যথার্থ তাৎপর্যপূর্ণ। তদবিরের কাজে তদবিরবাজদের আর্থিক যোগ যেমন আছে-একইভাবে এর একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও আছে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক যোগের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অতিব ভয়ঙ্কর। ফলে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে তদবিরের বিষয়টি নির্মোহভাবে দেখতে হবে। কেননা এর সাথে দেশের আইন-শৃঙ্খরা পরিস্থিতির বিষয়টি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের জন্য তদবির কোনোভাবেই মান্য করা যায় না। অতএব, এ ক্ষেত্রে তদবিরবাজদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতেই হবে। তালিকা করেই ক্ষান্ত হলে চলবে না, দৃশ্যমান শাস্তির উদ্যোগও নিতে হবে। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যথার্থ অর্থেই প্রয়োগ হবে, তদবিরবাজদের দমন হবে সেই প্রত্যাশাই রইল।
তদবিরবাজদের শুধু তালিকা নয়, শাস্তির উদ্যোগও নিতে হবে
