কারফিউ শিথিলে নগর জীবনে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েক দিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা রাজশাহী নগরী যেন প্রাণ ফিরেছে। নগরীর সব বিপণিবিতান খোলা হয়েছে। কর্মজীবী লোকজন দীর্ঘ বন্ধের পর কর্মস্থলে যাচ্ছেন। সকাল থেকেই নগরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। কারফিউতে রাজশাহীতে আটকে পড়া লোকজন বিভিন্ন গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছেন। রাজশাহী নগরীর ভদ্রা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রাজশাহী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি দিনাজপুর। তিনি রাজশাহী আটকে পড়েছিলেন। বাস চালু হওয়ায় তিনি বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
গত শনিবার রাতে কারফিউ জারি হলে সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও স্থবিরতা নেমে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় লোকজন বেশি বাইরে বের হননি। কারফিউ শিথিলের সময় অল্প কিছু মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বের হতেন। সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। ফিরেছে স্বস্তি।
এদিকে কারফিউ সিথিল হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললেও খুলেছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার। নগরীর কোচিংপাড়া ভীঢ় জমছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
অভিভাবকরা বলেন, চলমান কোটা আন্দোলনের কারনে স্কুল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। অনেক স্কুলের পরীক্ষা শুরু হলেও তা শেষ না হতেই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় কিছুটা প্রভাব পড়লে, কারফিউ সিথিল হওয়ায় কোচিং সেন্টারগুলো খুলে দেয়ায় তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। ছেলেমেয়ারা আবারোও লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে।
রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে কথা হয় শিরোইল এলাকার আরমান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘ কদিন বাড়িতে বন্দি থাকার পর বাইরে এসে অনেকটাই স্বস্তি বোধ করছেন। প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারছেন। সেইসাথে আইনশৃংখলা বাহিনীর কড়া নগজদারির কারনে আমাদের মতো সাধারন মানুষ সাহস করে বাইরে বের হচ্ছেন।
মাস্টারপাড়া পাইকারী কাঁচাবাজারে হেতেম খাঁ এলাকার বশির আহমেদ বলেন, প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাজারে এসেছেন। কারফিউ সিথিল হওয়ায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে। আশা করছি, পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়ে একবারে স্বাভাবিক হবে।
অন্যদিকে, কারফিউ সিথিল হওয়ায় আন্ত:জেলাসহ দুরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারন সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাচ্ছে। পাশের জেলাগুলোর সঙ্গে বেশ বাস চলাচল করছে। পরিস্থিতি অনুকুল থাকায় মানুষ স্বস্তিতে নিজনিজ গন্তব্যে ফিরছেন।
এছাড়াও দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর রাজশাহী স্টেশন ছেড়ে গেছে ট্রেন। তবে এই ট্রেন চলবে স্বল্প পরিসরে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় একটি লোকাল ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ কদিন রাজশাহী স্টেশন থেকে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। রাজশাহী স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেনও দাঁড়িয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী সপ্তাহ থেকে ট্রেন চলতে পারে বলে ধারনা রেল কর্তৃপক্ষের।
রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশনের ব্যবস্থাপক আব্দুল করিম জানান, কারফিউ শিথিলের জন্য স্বল্প দুরুত্বে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। লোকাল ৫৬৩ ট্রেনটি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপরে একই ট্রেন আবার ফিরে আসবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কারফিউ চলাকালে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে সমস্যায় পড়েছেন। এ কারণে কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে। রাজশাহীতে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। সারাদেশের তুলনায় রাজশাহী পরিস্থিতি অনেক ভালো। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী তৎপর রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় রাজশাহী জেলা ও মহানগরীতে ১৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ১১৯ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া, মতিহার ও চন্দ্রিমা থানায় এ পর্যন্ত মোট ৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ ১৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।