অবরুদ্ধ রাবি উপাচার্যকে উদ্ধার করল পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দ্বারা অবরুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি ক্যাম্পাসে যৌথ অভিযান চালিয়ে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে উদ্ধার করে।

পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবির ঘণ্টাব্যাপী অভিযান শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলে ফিরেছেন। বর্তমানে ক্যাম্পাস জনশূন্যে পরিণত হয়েছে।

ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে বের করে আনে।

অভিযানের বিষয় জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ভিসি স্যারকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব যৌথ অভিযান চালিয়েছে। স্যারকে অবমুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে হলে অবস্থান করতে পারবে। পুলিশ বিনা কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে হয়রানি করবে না। হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদেরকে নিরাপত্তা দেবে। তবে অযথা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যেন ঘুরাফেরা না করে। কারণ রাত থেকে পুলিশ ও বিজিবি টহল দেবে।

আরও পড়ুনঃ   নগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১১ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমরা অনেক ধৈর্য ধরে তাদের সঙ্গে তিন বার বসেছি। তাদের কথা শুনেছি। তারা আমাদের কথা শুরুতে শুনেছিল, এর কিছুক্ষণ পর তারা আমাদের জানাল, বিষয়টি আর আমাদের হাতে নেই, বহিরাগত প্রবেশ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে এখানে ছিল না। সবশেষে বহিরাগতরা এখানে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা করতে এসেছিল। হলে যারা থাকবে বা চলে যাবে আজকের জন্য তাদের সব দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করে আমাদের পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করে দিল। ফলে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি।’

অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার আরও বলেন, ‘আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসনকে কল করেছি। তারা আমাদের উদ্ধার করেছে। আজকে যারা হলে থাকবে, তাদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। ক্যাম্পাসের পুরো দায়িত্ব এখন প্রশাসনের হাতে, আমরা তাদের নির্দেশে চলব।’

আরও পড়ুনঃ   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নির্দেশনা দেওয়ার পর আমরা ক্যাম্পাসে এসে সন্ধ্যা ৭টা থেকে আধা ঘণ্টাব্যাপী উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে প্রশাসন সহযোগিতা চাইলে আমরা সাহায্য করব।’

এর আগে আজ বুধবার সকালে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বেলা আড়াইটার দিকে প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায় কর্তৃপক্ষ।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাদের জন্য নেওয়া খাবারও ছিনিয়ে নেয় আন্দোলনকারীরা।

পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা প্রশাসন ভবনের ফটক তালা দিয়ে ঘেরাও করে রাখেন। এতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আটকা পড়েন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ওই ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।